তাহেরের গোপন বিচারের কিছু তথ্য মিলেছে

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল এম এ তাহেরের গোপন বিচারের কিছু তথ্য খুঁজে পেয়েছে সরকার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তাহেরের কয়েদি নম্বর, কোন ধারায় সাজা হয়েছিল, থানার নাম ও মামলা নম্বর, ট্রাইব্যুনালের নাম ও মামলা নম্বর, রায় ঘোষণা ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তারিখ। তবে রায়ের অনুলিপি এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তাহেরের গোপন বিচারের আগে যে মামলা হয়েছিল, সে-সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য যেহেতু বের হয়ে এসেছে, সেহেতু এসব তথ্যের সূত্র ধরেই এ ব্যাপারে অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কিসের ওপর ভিত্তি করে তাহেরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল, তা বের হয়ে আসবে।
প্রসঙ্গত, হাইকোর্ট গত ২৩ আগস্ট এম এ তাহেরের গোপন বিচারের নথি তলব করেন। একই সঙ্গে তাহেরের গোপন বিচারের জন্য ১৯৭৬ সালের ১৬ নম্বর সামরিক ফরমানের (মার্শাল রেগুলেশন) আওতায় আদালত গঠন, এর আওতায় গোপন বিচার ও তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের এসব তথ্যসংবলিত একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা থেকে আজ মঙ্গলবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজের কাছে পাঠানো হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘কর্নেল তাহের বীর উত্তমকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানকারী সামরিক ট্রাইব্যুনালের রায়ের আদেশ/ডকুমেন্টস অনুসন্ধান করে এ-সংক্রান্ত ফলাফল মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কিছু তথ্য না থাকায় চাহিত রায়ের আদেশ/ডকুমেন্টস সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।’
মন্ত্রণালয় জেলা জজকে যেসব তথ্য পাঠিয়েছে, এর মধ্যে তাহেরের কয়েদি নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে ৩৬২১/এ। সে সময় তাহেরের নামে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়। মামলা নম্বর ছিল ০৮(৬)৭৬। বিচার করা হয়েছিল বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনালের মামলা নম্বর ছিল ০১/৭৬। ১২১-এ দণ্ডবিধির ১৯৭৫ সালের ১৩ এমএলআর ধারায় বিচার করা হয়েছিল। তাহেরের বিচারের রায় ঘোষণা করা হয়েছিল ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই। মৃত্যদণ্ড কার্যকর করার তারিখ ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই।
রিট আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী শাহ্দীন মালিক এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, কিছু তথ্য বের হয়ে এসেছে, এটি অবশ্যই ভালো দিক। তবে তিনি এ মামলার আইনজীবী বলে কোনো মন্তব্য করা সঠিক মনে করেন না। গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এ রিট করা হয়।
জানা গেছে, সম্প্রতি অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক ইফতেখার আহমেদ এক চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানান, তাঁদের কাছে কর্নেল তাহেরের মৃত্যদণ্ডের রায়ের তারিখ ও তাঁর গ্রামের নাম ছাড়া গোপন বিচারের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই।
সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, সশস্ত্র বিভাগ থেকে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়, ‘স্পেশাল মার্শাল ল ট্রাইব্যুনাল রেগুলেশন, ১৯৭৬ অনুযায়ী গঠিত স্পেশাল মার্শাল ল’ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মাধ্যমে তাহেরকে মৃত্যদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
ওই বিচারের অনেক আগেই ১৯৭২ সালের ৬ অক্টোবর তাহের অবসরে যান এবং ১৯৭৩ সালের ৬ জুলাই সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। যে কারণে তাহেরের বিচার স্পেশাল মার্শাল ল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে করা হয়নি। এসব কারণে বিচারের বিষয়ে কোনো নথিপত্র বা রায়ের আদেশ সেনা সদরে নেই।
সূত্র জানায়, ১৩ জানুয়ারি এ মামলার শুনানিতে তৎকালীন ঢাকার জেলা প্রশাসক ও সাবেক সচিব এম এম শওকত আলীকে আজ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাহেরের গোপন বিচারের জন্য গঠিত বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ প্রসঙ্গে তাঁকে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ১২ জানুয়ারি শুনানিতে পঁচাত্তরের নভেম্বর থেকে ’৭৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় থাকা সেনাসদস্যদের নাম-ঠিকানা ও বর্তমান অবস্থান জানাতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত ওই সময় বিচারের জন্য গঠিত বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালের বেসামরিক ও সামরিক চার সদস্যের অবস্থান জানতে চেয়েছেন। আজ এসব বিষয় জানাতে বলা হয়েছে।
তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তাঁর ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের ও সামরিক আদালতের বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরেক ভাই প্রয়াত ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ আগস্ট আদালত তাহেরের গোপন বিচার প্রশ্নে রুল জারি করেন।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger