স্কুলযাত্রায় অন্য আনন্দ by মানসুরা হোসাইন

বাসে উঠতে-নামতে নেই হুড়োহুড়ি। ভেতরেও নেই সিট নিয়ে ঝগড়াঝাটি। নির্দিষ্ট জায়গায় নামার সময়ও বাসের চালক ও সহকারীরা নিচ্ছেন বাড়তি যত্ন। ঢাকা নগরে এমন বাসের অস্তিত্ব আছে, ভাবতে বেশ অবাকই লাগে। তবে নতুন চালু হওয়া স্কুলবাসে এমন দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে।

ফলে যাতায়াতের সমস্যায় পীড়িত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা খুব খুশি। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ভাবছেন, সাতসকালে নিত্যদিনের অন্তত একটি ভোগান্তির তো অবসান হলো।
গতকাল সোমবার ঘড়িতে সকাল সাড়ে সাতটা। শ্যামলীতে এসে থামল একটি স্কুলবাস। অপেক্ষমাণ মা ও মেয়ে ধীরে-সুস্থে বাসে ওঠার পর বাসটি আবার চলতে শুরু করল। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে প্রতিবেদক বাসের চালক ও হেলপারের অনুমতি নিয়ে বাসটিতে উঠলে তীব্র প্রতিবাদ জনালেন অভিভাবকেরা। তাঁদের সোজা কথা, ‘শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ছাড়া অন্য কেউ এই বাসে উঠতে পারবেন না।’ তাঁরা অবশ্য শান্ত হলেন, স্কুলবাসের হালহকিকত কেমন তা জানতেই বাসে ওঠার বিষটি জানানোর পর। সক্ষোভে তাঁরা বললেন, আগে লোকাল বাসে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তোলা হতো না। অনেক সময় এমনও হয়েছে যে শিক্ষার্থীর এক পা বাসে, অন্য পা মাটিতে, তখন বাসটি চলা শুরু করে দিয়েছে। নামার সময়ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নামতে হতো। নতুন এই স্কুলবাস চালু হওয়ায় সেই অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। এটি যেন চালু থাকে, সেই দাবি সবার।
গত রোববার থেকে ১৪টি স্কুলবাস নেমেছে রাজধানীর পথে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) তত্ত্বাবধানে পল্লবী থেকে টেকনিক্যাল হয়ে আজিমপুর পর্যন্ত চলছে বাসগুলো। প্র্রতি ১০ মিনিট পর পর সকাল ছয়টা (শীতে সাড়ে ছয়টা) থেকে নয়টা, আবার বেলা ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়া করছে বাসগুলো। থামছে মোট ৩৩টি নির্দিষ্ট স্থানে। নগরের ২৬টি স্কুল এই বাসের সেবা পাচ্ছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মুখে হাসি: এই বাস সার্ভিস চালুর মূল উদ্দেশ্য নগরের যানজট কমানো। তবে ব্যক্তিগত গাড়িটি বাসায় রেখে সন্তানকে বাসে করে স্কুলে পৌঁছে দিচ্ছেন তেমন একজন অভিভাবককেও পাওয়া গেলো না বাস চালুর দ্বিতীয় দিনটিতে। বিভিন্ন বাসে যাতায়াতকারীরাই সেবাটি নিতে এসেছেন। ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা প্রয়োজন বলে অভিভাবকেরা অভিমত ব্যক্ত করলেন। তবে যাঁরা এই সেবা নিচ্ছেন, তাঁরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন।
মিরপুর ১১ নম্বরের বাসিন্দা রায়হানা পারভীনের দুই সন্তান পড়ে গভর্নমেন্ট বয়েজ ও সেন্ট জোসেফ স্কুলে। আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা স্মরণ করে তিনি বললেন, ‘সিট তো পাওয়াই যেত না, ভাড়াও বেশি ছিল। সবচেয়ে মুশকিল ছিল বাসে নিতেই চাইত না। এসব ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্তি পেলাম বলেই মনে হচ্ছে।’
বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত সবুর খন্দকারের মেয়ে ভিকারুননিসা নুন স্কুলের আজিমপুর শাখায় পড়ে। তিনি বললেন, ‘লোকাল বাসে মেয়েকে একা ছাড়তে পারতাম না। কিন্তু এই বাসের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে, মেয়ে একাই স্কুলে যাতায়াত করতে পারবে।’
তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা সকালে ১০ মিনিটের বদলে পাঁচ মিনিট পর পর বাসগুলো চালুর দাবি জানান। কোনো কারণে একটি বাস ধরতে না পারলে পরের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া থামার জায়গাগুলোও কিছুটা ভিন্নভাবে নির্ধারণ করলে ভালো হবে বলে তাঁদের মন্তব্য।
বাস নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে থামলেই বাসের কর্তব্যরত তত্ত্বাবধায়ক (সুপারভাইজার) ওয়াসিমুল হক সহকারীকে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, ‘বাচ্চাটাকে সাবধানে নামাও।’ শিক্ষার্থীদের বলছেন, ‘তাড়াহুড়ো করবে না। বাস থামার পর ধীরে ধীরে নামবে। আগে আগে বাম পা দেবে।’ তিনি জানালেন, অন্য বাসে কাজ করার সময় এ ধরনের সতর্কতা কখনোই মেনে চলতেন না।
বাসের চালক শামসুল হক জানালেন, বাস চালানোর ক্ষেত্রে তিনি আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন।
নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষার্থীর সঙ্গে একজন অভিভাবকও স্কুলবাসে যাতায়াত করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ টাকা থেকে ১৮ টাকা পর্যন্ত।
তবে অনেক অভিভাবকই এখনো স্কুলবাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। পথে যেখানে যেখানে বাস থামছে, সেখানে এসে অনেকে সময়সূচি জেনে নিচ্ছিলেন। তবে অন্য এলাকার অভিভাবকেরা যখন জানলেন যে এই সেবা তাঁদের কাজে লাগবে না, তখন তাঁরা কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেন প্রথম আলোর কাছে।
কিছু কাজ বাকি: বাসে প্রশিক্ষিত নারী কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যও বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। বিআরটিসির পরিচালক (কারিগরি) কর্নেল আকতার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ২৬টি স্কুলে টিকিট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কেউ ১৫ দিন বা এক মাস বা বিভিন্ন মেয়াদের টিকিট নিয়ে রাখতে পারবেন। এর বাইরে যেকোনো স্কুল কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করলে টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বিআরটিসি। কোনো নির্দিষ্ট স্থান থেকে কেউ উঠতে চাইলে নির্দিষ্ট ভাড়া দিয়েও উঠতে পারবেন। যে কাজগুলো এখনো বাকি আছে, সেগুলো দ্রুত করারও আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা। তিনি এই সেবা চালু রাখতে সহায়তা করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger