লাইনচ্যুত গণতন্ত্রের ট্রেন by আলী ইদ্‌রিস

বলা হয় একটি জাতি বা গোষ্ঠী তার যোগ্যতা অনুযায়ী নেতা-নেত্রী পেয়ে থাকে। জাতি নিজেই তার নেতা ও শাসক নির্বাচিত করে। এ নির্বাচনের মধ্যে যদি জনগণ ভুল সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে জাতি অযোগ্য,
অদক্ষ, দুর্নীতিগ্রস্ত  নেতা বা শাসক উপহার পায়। আধুনিককালে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অর্থাৎ প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একটি ভোটের অনেক দাম। কারণ, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লাখ লাখ ভোট পেয়েও এক ভোটের ব্যবধানে একজন প্রার্থী হেরে যেতে বা জয় লাভ করতে পারেন। জনগণের এই ভোটাধিকার যদি কেড়ে নেয়া হয় তাহলে গণতন্ত্র থাকে না। দশম জাতীয় নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে ৪ কোটির বেশি ভোটার তাদের সাংবিধানিক ভোটাধিকার  প্রয়োগ করে পছন্দমতো নেতা-নেত্রী নির্বাচন করতে পারেননি। তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে মহাজোটের মনোনীত প্রতিনিধিবৃন্দ। এ মনোনয়ন টেন্ডার ভাগাভাগি করে নেয়ার মতো হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জোট নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলেই এমনটি হয়েছে। বিএনপি ১৮ দলীয় জোট কেন নির্বাচনে অংশ নেয়নি তা সবার জানা, এতে গণতন্ত্র লাইনচ্যুত হয়েছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এখন লাইনচ্যুত গণতন্ত্রের ট্রেনকে লাইনে ওঠাতে হলে সব দলের অংশগ্রহণে আর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান দরকার। একমাত্র ভারত ছাড়া পৃথিবীর বহু দেশ এই ভোটারবিহীন নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়ে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুপারিশ করেছে। ভারতের ভেতরেও জাতীয় দৈনিকগুলো দিল্লির অন্ধ সমর্থনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। ডেইলি টেলিগ্রাফ লিখেছে- লজ্জাজনক নির্বাচন হওয়া সত্ত্বেও দিল্লি সরকার আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়িয়েছে যে জন্য ভারতকে মূল্য দিতে হবে। ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকা বলেছে- ভারতের উচিত শেখ হাসিনাকে সমঝোতার পরামর্শ দেয়া। আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে- গণতন্ত্রের মাপকাঠিতে নতুন সরকারের বৈধতা প্রশ্নযোগ্য কিংবা সরাসরি অবৈধ। দ্য স্টেটসম্যান লিখেছে- নিজের ছকে পাওয়া বিজয়ে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার এবং অবশ্যই আওয়ামী লীগের বিশ্বাসযোগ্যতা বিনষ্ট হয়েছে। দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও বৈধতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। দি হিন্দু লিখেছে- নির্বাচন এক সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বলে শেখ হাসিনার দাবির প্রতি ভারতের সমর্থন কাজে আসবে না, বরং তারা দলীয়ভাবে পক্ষপাতী বলেই দৃশ্যমান হবে। টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে- ভারত দুই পক্ষের মধ্যে সৎ ও আন্তরিক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারে। ভারত সরকারের উচিত উভয় দেশের জনমতের মূল্যায়ন করা এবং ঐতিহ্যবান, প্রাচীন গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচানো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  ইঙ্গিত দিয়েছেন যে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা হলে একাদশ সংসদের নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হতে পারে। যোগাযোগমন্ত্রী অবশেষে বলেছেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে কিন্তু সর্বজনগ্রাহ্য হয়নি। অর্থমন্ত্রী ক’দিন আগে বলেছিলেন যে এ নির্বাচন সংবিধান বাঁচানোর নির্বাচন, প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতা হলে শিগগিরই (২৪শে জানুয়ারির পরে) আরেকটি সর্বদলীয় নির্র্বাচন হতে পারে। এদিকে সরকারের ভেতরে অন্য মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বলেছেন নতুন সরকার পাঁচ বছর থাকবে। তাহলে সরকারের প্রকৃত অভিলাষ কি এখনও স্পষ্ট  কিছু বোঝা যায় না। এদিকে বিএনপি জোট হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার করে শান্তিপূর্ণ  আন্দোলনের যে কর্মসূচি দিয়েছে তাতে সরকারের অনুমতি দেয়া উচিত এবং যে সংলাপ চলছিল তা আবার শুরু করা প্রয়োজন। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে এবং সমঝোতায় পৌঁছতে বিএনপিকেও প্রয়োজনীয় ছাড় অবশ্যই দিতে হবে। তবেই দীর্ঘ সংগ্রামের পর ২৩ বছর আগে  পুনরুদ্ধারকৃত গণতন্ত্র আবারও বেঁচে যাবে।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger