স্ত্রীকে বিক্রি!

বিয়ের তিন দিন পর মেয়েটি (২২) জানতে পারেন, তাঁর স্বামীর আরেকটি স্ত্রী রয়েছে। এ নিয়ে তাঁদের ঝগড়া হয়। পরে মেয়েটিকে মাদারীপুরের যৌনপল্লিতে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন প্রতারক স্বামী।
খবর পেয়ে র‌্যাব-৮-এর সদস্যরা গত রোববার মেয়েটিকে মাদারীপুর শহরের পুরানবাজার এলাকার যৌনপল্লির সামনে থেকে উদ্ধার করেন; গ্রেপ্তার করেন প্রতারক স্বামী আবদুল আজিজ সরদারকে (৩৮)। আজিজকে গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে মাদারীপুর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে মেয়েটিকে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মেয়েটির বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। আজিজের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ কৃষ্ণনগর গ্রামে।
উদ্ধার হওয়া মেয়ে ও তাঁর স্বামীর ভাষ্যমতে, প্রায় এক বছর আগে শ্রীপুরে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গেলে আজিজের সঙ্গে মেয়েটির পরিচয় হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের তিন দিন পর মেয়েটি জানতে পারেন, আজিজের আরেকটি স্ত্রী রয়েছে। এরপর দুজনের ঝগড়াঝাঁটি হলে আজিজ মাদারীপুরে চলে আসেন। গত শুক্রবার আজিজ শ্রীপুর গিয়ে স্ত্রীকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে মাদারীপুরের পুরানবাজার এলাকার যৌনপল্লিতে নিয়ে আসেন।
উদ্ধারের পর মেয়েটি সাংবাদিকদের বলেন, মাদারীপুরে বোনের বাসায় রাখার কথা বলে আজিজ তাঁকে যৌনপল্লির সর্দারনি সুরমা বেগমের কাছে রেখে যান। পরদিন শনিবার তিনি বুঝতে পারেন, তাঁকে যৌনপল্লিতে রাখা হয়েছে। তখনই স্বামীকে অনুরোধ করেন, তাঁকে সেখান থেকে আজিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে। কিন্তু আজিজ তাঁকে জানান, ১০ হাজার টাকায় তাঁকে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাঁকে খারাপ কাজ করতে হবে।
প্রচণ্ড দুঃখে শনিবার সারা রাত মেয়েটি কান্নাকাটি করেন। রোববার সকালে মেয়েটির ছবি তুলে যৌনপল্লির লোকজন; এবং মেয়েটি যে স্বেচ্ছায় যৌনবৃত্তিতে নেমেছেন, এ জন্য তাঁর কাছ থেকে জোর করে হলফনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করে তারা।
র‌্যাব-৮ মাদারীপুর ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সিরাজুল ইসলাম বলেন, মেয়েটি হলফনামায় স্বাক্ষর করতে না চাইলে তাঁকে মারধর করতে থাকে যৌনপল্লির লোকজন। খবর পেয়ে র‌্যাব-৮-এর মাদারীপুর ক্যাম্পের একটি দল মেয়েটিকে উদ্ধার ও নারী পাচারকারী আবদুল আজিজ সরদারকে গ্রেপ্তার করে।
তবে যৌনপল্লির অন্য কাউকে গ্রেপ্তার করেনি র‌্যাব। আজিজ র‌্যাব ও সাংবাদিকদের কাছে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘১০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার স্ত্রীকে বিক্রি করেছি। তবে সর্দারনি সুরমা আমাকে মাত্র ৭০০ টাকা দিয়েছেন। স্ত্রীকে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে ভুল করেছি। কাজটি করা ঠিক হয়নি।’
মাদারীপুর সদর থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, উদ্ধার হওয়া মেয়েটি তাঁর স্বামী আজিজের বিরুদ্ধে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। আজিজকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger