একটুখানি রক্ত ত্যাগ ।। রাসেল আল ইমরান

পূর্ব প্রকাশের পর
অপরাধ বোধ জেগে উঠল সবুজের মনে। রক্ত পাওয়া যায়নি? জানতে চাইলো সে।
শেষ পর্যন্ত জোগাড় করতে পারিনি। কি আর করা।
আমি দুঃখিত, মনির ভাই। মাথা নিচু করে বললো সবুজ।
না- না। তুমি দুঃখিত হবে কেন ? হাজার হলে ও তুমি তো ক্ষতি থেকে বেঁচে গেলে, সেটাও বা কম কি ? আসলে.......? লজ্জা আর গ্লানিতে মাথা উঁচু করতে পারলো না সবুজ।
আমার মনটা ভালো নেই, ভাইয়া আমি আসি। পরে কথা হবে, কেমন ? কথা না বাড়িয়ে রওনা দেন মনির ভাই। বিষন্ন মনে ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে পা বাড়ায় সবুজ। কাছে আসতেই বাড়ির ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ কানে এলো তার।
কি ব্যাপার ?দ্রুত পায়ে প্রবেশ করলে বাড়ির ভেতর। ড্রায়ং রুমে কয়েকজন মহিলা মা- কে ঘিরে রয়েছে। অবোধ ধারায় কাঁদছেন মা। কি হয়েছে মা ? সবুজকে দেখতে পেয়ে অবেগ উথলে উঠলো তার। জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কান্না শুরু করলেন।
ব্যাকুল কন্ঠে জানতে চাইলো সে।
তোর বাবা এক্সিডেন্ট করেছে। হসপাতালে আছে। অজ্ঞান।
কি বলছো মা কিভাবে হলো? কোথায় হলো ? চিৎকার দিয়ে ওঠে সবুজ।
অফিসের সামনে। রিক্সশার পেছনে ট্রাক বাড়ি মেরেছে। অনেক রক্ত ক্ষরন হয়েছে তার বাবার। পাঁচ ব্যাগ রক্ত লাগবে। রক্ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছোনা। কাঁদতে থাকেন মা।
কোন হাসপাতালে, বাবার কাছ কে আছে ? আমি যাব সেখানে। জানতে চায় সবুজ। সবুজের চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে পানি নেমে আসে। তোর চাচা- ফুফুরা সবাই আছে। তুই বরং তোর বন্ধু- বান্ধবদের কাছে খুঁজে দেখ বাবা, রক্ত মেলে কিনা ?
ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে ছুটে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে সবুজ। বাবাকে নিয়ে একটার পর একটা স্মৃতি ভেসে উঠছে তার মানে । না বাবার ক্ষতি সে কোন ভাবেই কল্পনায় আনতে পারে না। যে ভাবেই হোক খুঁজে বের করতে হবে রক্ত।
কার কাছে পাবে, কোথায় যাবে ভাবতে থাকে সবুজ। হঠাৎ মনে ভেসে ওঠে শামিমের কথা। ওর গ্র“পে আর বাবার গ্র“প তো একই। মনে পড়ে শমিমের অশ্র“সিক্ত মুখে যে দিন সে এসেছিল সবুজের কাছে, ওর বোনের জন্য। রক্তের অভাবে মারা গেছে সে। আর কোন মুখ নিয়ে সে দাঁড়াবে তার সামনে, না। এটা সম্ভব নয়।
উদভ্রান্তের মতো হাঁটতে থাকে সবুজ। গন্তব্য জানা নেই। ভাবছে কোন সংস্থার কাছে যাবে কি না ? কিন্তু সবার রক্ত তো নিরাপদ নয় ?
হঠাৎ দূর থেকে দেখতে পায় শামিমকে। শামিম ও সবুজকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে।
আরে সবুজ। তুমি এখানে ? তোমার বাবার খবর কি ? এক্সিডেন্টের খবর পেয়ে তোমাদের বাড়ির দিকেই যাচ্ছিলাম। সবুজের হাত দুটো ধরে জিজ্ঞাসা করে শামিম।
খবর ভালো না, শামিম । প্রচুর রক্ত লাগবে। পাওয়া যাচ্ছে না।
তাই নাকি ? কোন গ্র“প ?
বি পজেটিভ।
আরে, আমারও তো একই গ্রুপ। আমিই দেব রক্ত। এক্ষুনি যাব। চল। ব্যাস্ত কন্ঠে বলে শমিম। শমিমের মহানুভবতায় নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। সবুজের। যাকে কয়েকদিন আগেই সে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সাহায্য করেনি আর আজ সেই কিনা তার বাবাকে রক্ত দেয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে সবুজ রক্ত দেবে তুমি ? আমার বাবার জন্য ?
কেন নয় ? ভাই ? আমার সামান্য এক ব্যাগরক্তে যদি একজন ভালো মানুষের জীবন বেঁচে যায়, এতটুকু ত্যাগ করা কি একজন মুসলমানের কর্তব্য নয় ? শামিমের কথা শুনে হাউ- মাউ করে কেঁদে ওঠে নাইম। দু’হাতেসজোরে বুকে জড়িয়ে ধরে শমিমকে।
আমাকে ক্ষমা করো শামিম। আমি খুব লজ্জিত। শামিমের চেখের পানি, বোনকে হারাবার বেদনায়।
তার প্রয়োজন নেই। সে চলে যাবে এটাই হয়তো আল্লাহর সিদ্ধান্ত ছিল। চলো ভাই। হাসপাতালে যাই। দেরি হলে চাচার ক্ষতি হতে পারে।
হ্যাঁ, তাই চল। দু’জনে হাতে হাত রেখে রওনা দিল হাসপাতাল পানে। দু’জনের চোখেই আনন্দাশ্র“। বসন্তের শান্তিময় সুবাতাস আর আত্মত্যাগ ও সহমর্মিতার বন্ধনে আবদ্ধ দু’টি হৃদয় এক হয়ে মিশে যেন একাকার হয়ে গেল। (সমাপ্ত)
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger