পহেলা বৈশাখ
-এর উৎসব আমেজ, বৈশাখী মেলা, হালখাতা, আরো নানান মজার পর তার আমেজ শেষ হতে না হতেই চলে আসে জৈষ্ঠ্য মাস। এই মাসটি আমাদের কাছে মধুমাস নামেও পরিচিত। কারণ মিষ্টি মধুর অনেক ফল পাওয়া যায় এ মাসে। শুধু তাই নয়, সারা বছরের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি ফল পাওয়া যায় জ্যৈষ্ঠ মাসে। এমন দিনে বিচিত্র ফলের মধুগন্ধে ভরে ওঠে চারপাশ। মধুমাসকে ঘিরে শিশুদের উৎসাহ গ্রামেরই বেশি চোখে পড়ে।
-এর উৎসব আমেজ, বৈশাখী মেলা, হালখাতা, আরো নানান মজার পর তার আমেজ শেষ হতে না হতেই চলে আসে জৈষ্ঠ্য মাস। এই মাসটি আমাদের কাছে মধুমাস নামেও পরিচিত। কারণ মিষ্টি মধুর অনেক ফল পাওয়া যায় এ মাসে। শুধু তাই নয়, সারা বছরের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি ফল পাওয়া যায় জ্যৈষ্ঠ মাসে। এমন দিনে বিচিত্র ফলের মধুগন্ধে ভরে ওঠে চারপাশ। মধুমাসকে ঘিরে শিশুদের উৎসাহ গ্রামেরই বেশি চোখে পড়ে।
জ্যৈষ্ঠ মাসের ফলের তালিকা
এতই দীর্ঘ যে সবার পছন্দের কিছু না কিছু ফল তখন বাজারে থাকে। গ্রামে যাদের ফল কেনার সামর্থ্য নেই তারাও এ মৌসুমে একেবারে বঞ্চিত হয় না। কারণ আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল হলেও কোনো বাড়িতে একটিও আমগাছ নেই, এমন দেখা যায় না। এক সময় তো এ দেশে ফলের প্রাচুর্যও ছিল। নিজের বা পরের গাছ বলেও তেমন কোনো বিধিনিষেধ ছিলো না। অন্তত শিশুদের জন্য বাগানের পরিধি কখনই সীমিত ছিলো না।
এতই দীর্ঘ যে সবার পছন্দের কিছু না কিছু ফল তখন বাজারে থাকে। গ্রামে যাদের ফল কেনার সামর্থ্য নেই তারাও এ মৌসুমে একেবারে বঞ্চিত হয় না। কারণ আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল হলেও কোনো বাড়িতে একটিও আমগাছ নেই, এমন দেখা যায় না। এক সময় তো এ দেশে ফলের প্রাচুর্যও ছিল। নিজের বা পরের গাছ বলেও তেমন কোনো বিধিনিষেধ ছিলো না। অন্তত শিশুদের জন্য বাগানের পরিধি কখনই সীমিত ছিলো না।
এখন শহরের মানুষতো বটেই গ্রামের মানুষকেও ফল-ফলারির জন্য বাজারের ওপর নির্ভর করতে হয়। তবুও মজার মজার ফল নিয়ে প্রতি বছরই জ্যৈষ্ঠ আসে মধুমাস হয়ে। ফল হোক সে নিজের বাগানের কিংবা বাজারের, তার স্বাদ পেতে কম বেশি সবারই ভালো লাগে।
কাঁঠাল জাতীয় ফল হলেও সে তুলনায় আম সবার প্রিয়। আর এ ফল সারা দেশের প্রায় সবখানেই পাওয়া যায়। শুধু পাকা আম নয়, কাঁচা আমেরও নানামুখী ব্যবহার রয়েছে। আমাদের দেশের সর্বত্র আম হলেও মাটির গুণাগুণ এবং আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে স্বাদের ভিন্নতা রয়েছে। তা ছাড়া উৎপাদন বা পর্যাপ্ত ফলনের ওপর ভিত্তি করেও কিছু বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে নানা স্বাদের আম হয় প্রচুর পরিমাণে। আমাদের দেশে রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে সবচেয়ে বেশি আম হয়। আমগাছ দেখে খুব সহজেই চেনা যায়। গাছ ১৮-২২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। মাঘ মাসে হলুদ রঙের থোকা থোকা ফুল বা মুকুল হয়। ফল পাকার মৌসুম বৈশাখ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত। এদের প্রজাতি সংখ্যা অনেক হওয়ায় ফলও নানা আকৃতির হয়; ছোট, বড়, মাঝারি, গোল, লম্বা, সরু ইত্যাদি। কাঁচা আম সবুজ, পাকলে হলুদ বা টকটকে লাল। মিষ্টি শাঁসের ভেতর একটা শক্ত আঁটি থাকে। আম স্বাদে গন্ধে সত্যিই অতুলনীয়। শুধু তাই নয়, তার আছে অনেক পুষ্টিগুণ।
কাঁঠাল
জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময় হচ্ছে জাতীয় ফল কাঁঠালের ভর মৌসুম। আমগাছ যতটা সহজে চোখে পড়ে সে তুলনায় কাঁটাল গাছের সংখ্যা কম। পানি এ গাছের প্রধান শত্রু হওয়ায় বাংলাদেশের নিচু এলাকার, যেসব স্থানে বর্ষায় পানি জমে থাকে সেসব স্থানে বর্ষায় পানি জমে থাকে সেসব স্থানে কাঁঠালগাছ খুব একটা নেই। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় কাঁঠালগাছ এতই বেশি যে সেসব এলাকা কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত। আমাদের তিন পার্বত্য জেলা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ আরও কয়েকটি জেলায় প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল হয়। কাঁঠালের স্বাদ, গন্ধ, পুষ্টিগুণ এবং সহজলভ্যতা- সবকিছু মিলিয়েই জাতীয় ফলের মর্যাদা পেয়েছে। এ ফল কাঁচা অবস্থায়ও খাওয়া যায়। এর গাছ চিরসবুজ, ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা ডিমাকৃতির, কালচে সবুজ, ঝরেপড়া পাতা গাঢ় কমলা রঙের। একেবারে মাটির কাছাকাছি থেকে ওপরের সরু ডাল পর্যন্ত ফল হয়। ফুলের ওপরের আবরণ খড়- সাদা এবং পাতা গজানোর পর সেটি ঝরে গিয়ে আঙুলের আকার ধারণ করে, এর নাম মুচি। মুচিই হচ্ছে কাঁঠালের ফুল। ফুলের গড়ন গোলাকার বা লম্বাটে। কোনটির গা প্রায় সমান আর কোনোটির খোঁচা খোঁচা কাঁটা থাকে। পাকা কোয়া বা খাবারের অংশটুকু রসাল, মিষ্টি ও সুস্বাদু। এ ফলে পুষ্টিগুণ অনেক। কাঁঠালের বীজ খাবার উপযোগী এবং পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।
জাম
মুখরোচক এবং রসাল ফল। পাকা জাম দেখতে ঘনকালো বলেই হয়তো এর নাম কালো জাম, প্রায় সারা দেশেই জাম গাছ পাওয়া যায়। থোকা থোকা বেগুনি রঙের ফল ছোটদের অতিপ্রিয়। ফেব্রুয়ারি- মার্চ মাসে থোকায় থোকায় সাদা সুগন্ধী ফুল ফোটে, মে- জুন মাসে ফল পাকে। ফল টকÑ মিষ্টি স্বাদের। লবণÑ মরিচ মাখিয়ে খেতে দারুণ মজা। জাম মটরশুঁটির আকৃতি থেকে আরম্ভ করে পায়রার ডিমের আকৃতি পর্যন্ত হয়। এ ফল পুষ্টিকর।
জামরুল
বেশ সুদর্শন ফল। এর গঠন, আকৃতি ও সাদা মসৃণ গায়ের রঙ সবাইকে মুগ্ধ করে। এটি গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে আমাদের তৃষ্ণা মেটায়। আমাদের দেশে এক সময় অনেক গাছ থাকলেও এখন সংখ্যায় কমেছে। জামরুল মাঝারি আকারের চিরসবুজ গাছ। প্রচুর ডালপালা ও পাতা হয়। বসন্তে সাদা রঙের অসংখ্য পুং কেশরযুক্ত বড় বড় ফুলের গাছ সুন্দর দেখায়। ফল পাকে গ্রীষ্মÑ বর্ষায়। ফল দেখতে নাশপাতির মতো, থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে। কাঁচা-পাকা উভয় অবস্থাতেই দেখতে প্রায় সাদা। ফলের খোসা নেই, তার বদলে থাকে স্বচ্ছ মোমের মতো আবরণ। ভেতরে খয়েরি রঙের ৪Ñ৫ টি বীজ থাকে।
লিচু
গ্রীষ্মের আকর্ষণীয় ফল। এই মজাদার ফলটি কিন্তু বেশি দিন থাকে না। মৌসুমের প্রথম দিকেই শেষ হয়ে যায়। এই মনলোভা ফলটি দেশের সব অঞ্চলেই সমভাবে উৎপন্ন হয়ে যায়। মাত্র কয়েকটি জেলায় উন্নত জাতের লিচু দক্ষিণÑ চীনের উদ্ভিদ প্রজাতি হলেও আমাদের দেশে এর কদর অনেক বেশি। গাছ মাঝারি আকারের, চিরসবুজ। ডালপালা ছড়ানো, পাতা লম্বাটে, সবুজ, মসৃণ। ফুল ফোটে বসন্তে। অনেকটা আমের মুকুলের মতো, থোকা খোকা, রঙ সবুজÑ হলুদে মেশানো। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে হালকা লাল আর তামাটে রঙের মিশ্রণে চমৎকার দেখায়। ওপরের পাতলা আবরণটা ফেলে দিয়ে খেতে হয়। শাঁস নরম, সাদা, রসালো ও মিষ্টি। ভেতরে চকলেট রঙের বীজ থাকে।
আনারস
আনারস
গ্রীষ্মের টক-মিষ্টি স্বাদের সুস্বাদু ফল। তবে বাজারে প্রায় সারা বছর আনারস পাওয়া গেলেও গ্রীষ্মের আনারসের স্বাদই আলাদা। সারা বিশ্বে অসংখ্য প্রজাতির আনারস হয়। এদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে; কুইন, কায়েন ও স্পেনিশ। আমাদের আমাদের দেশের ক্যালেঙ্গা এবং জলডুবি জাতও এই তিন ভাগের মধ্যে পড়ে। মধুমাসের আনারসের বেশির ভাগই উৎপন্ন হয় তিন পার্বত্য জেলায়। স্বাদে গন্ধে অপূর্ব এ আনারস বাজারে আসে খুব অল্প সময়ের জন্য। আনারস গাছের কাণ্ড পাতা যুক্ত করাতের মতো। ফুল কাণ্ডের উপরিভাগে জন্মায়। একবার ফলন হলে গাছ কেটে আবার নতুনভাবে চারা লাগাতে হয়। আনারস বেশ খাদ্য গুণসম্পন্ন। প্রতিকেজি আনারস থেকে ৫০০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। তাজা ফল ছাড়াও বাজারে আনারসের জ্যাম, জেলি, স্কোয়ালি ইত্যাদি পাওয়া যায়।
শুধু কয়েকটি ফলই নয়। মধুমাসে আরো অনেক ফল পাওয়া যায়। বাজারে অনেক দিন থাকে তরমুজ, ফুটি, অনেক বুনো ফলও থাকে। আরো আছে গোলাপ জাম, বেতফল, আতাফল, বহেড়া ইত্যাদি।
পূর্বে মাসিক নতুন কিশোরকন্ঠে প্রকাশিত
Post a Comment