চাষী ও রাজকন্যা ।। আমিনুল ইসলাম চৌধুরী

চাষী ও রাজকন্যা 
আমিনুল ইসলাম চৌধুরী

অনেক অনেক দিন আগের কথা। বরেন্দ্র নামের জায়গায় বাস করত এক চাষি। কিন্তু সে ছিল বেজায় বোকা। মা ছাড়া কেউ ছিল না তার। যথারীতি সে একদিন মাঠে গেল কাজ করতে। কাজ করতে করতে সে গাছতলায় ঘুমিয়ে পড়ল। উঠে দেখল, তার কাস্তে গরম হয়ে গেছে। সে কেঁদে বলতে লাগল, ‘আমার কাস্তের জ্বর এসেছে, আমার কাস্তের জ্বর এসেছে।’ এ সময় এক প্রবীণ লোক ওই দিকেই যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, তোমার কাস্তেকে জলে ভিজিয়ে রাখো, জ্বর কমে যাবে। চাষি কাস্তেটা জলে ভিজিয়ে তুলে দেখল, কাস্তের জ্বর কমে গেছে।
এর পরের দিন চাষির মায়ের প্রচণ্ড জ্বর এল। সে কোনো ডাক্তার না এনে তাকে জলে ডুবিয়ে রাখল। তার মা মারা গেলেন। চাষি তখন কিছুই খায় না। নদীর পাড়ে বসে থাকে সব সময়।একদিন একটি শেয়াল যাচ্ছিল ওই দিকে। সে চাষির দুঃখের কথা শুনে বলল, ‘শোনো চাষি, তুমি যদি আমার কথা শোনো, তবে আমি তোমাকে রাজার মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেব।’ তবে এখন তোমাকে বাড়ি গিয়ে খেয়েদেয়ে মোটাসোটা হতে হবে। শেয়াল আরও বলল, এই এক মাস সে যেন শুধু কাপড় বোনে আর খাদ্যশস্য উৎপাদন করে। চাষি শেয়ালের কথামতো কাজ করে চলেছে। শেয়াল তো তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সে ঘটকালি করতে করতে এক রাজার সন্ধান পেল, যিনি তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিতে চান। শেয়াল তাঁকে বোকা চাষির ফটো দেখাল। চাষি ছিল খুবই সুদর্শন। তা ছাড়া শেয়াল চাষির পরিচয় দিয়েছে রাজার ছেলে বলে। বিয়ের দিন-তারিখও শেয়াল ঠিক করে ফেলেছে। শেয়াল আর চাষি মিলে সবাইকে দাওয়াতও দিল। চাষিকে শেয়াল বলল, সেখানে যেন কথা না বলে। চাষিকে ভালো করে সাজিয়ে নিয়ে চলল রাজপ্রাসাদের দিকে। গিয়েই শেয়াল দীন-দরিদ্রদের জন্য চাষির বোনা কাপড় আর উৎপাদিত খাদ্যশস্য বিলি করতে লাগল। খুবই জাঁকজমক করে বিয়ে হলো। চাষি দেখল, রুপার থালাবাসনে শত রকম খাবার। খাবারগুলো সে পকেটে পুরতে লাগল। শেয়াল সবাইকে বলল, ও তো খুব দরিদ্র, তাই গরিবদের সঙ্গে বসে খাবে আর তাদের মধ্যে খাবার বিলি করবে। বিয়ের প্রথম রাতেই সে দেখল, পালঙ্কের ওপর মশারি টানানো। ভাবল পালঙ্কের ওপর বুঝি আরেকটা ঘর, তাই সে মই বেয়ে যেই মশারির ওপর উঠল, ওমনি ধপাস। রাজকন্যা তা দেখে কাঁদল। কিন্তু সে ছিল বুদ্ধিমতী। তাই সে কিছুই প্রকাশ করল না। রাজাকে বলল, সে চাষিকে নিয়ে বেড়াতে যাবে ভিন দেশে। রাজাও তাতে অমত করলেন না। অনেক সৈন্য-সামন্ত, টাকাকড়ি দিয়ে তাদের ভিন দেশে পাঠালেন। সে সময় রাজকন্যা চাষিকে ভিন দেশি পণ্ডিতের শরণাপন্ন করে অনেক বিদ্যায় পারদর্শী করিয়ে তুলল। কিন্তু দেশ থেকে খবর এল, রাজা মারা গেছেন এবং তাঁর কোনো ছেলেসন্তান নেই বলে তাঁর জামাইকে রাজ্য পরিচালনার ভার দিয়েছেন। তারপর রাজকন্যা ও তার স্বামী দেশে ফিরে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger