শঙ্কা মুক্তির প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের by সুজয় মহাজন

রপতনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ পার করল দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহের পাঁচ লেনদেন দিবসের মধ্যে চারদিনই শেয়ারের দরপতন ঘটেছে। সপ্তাহশেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক নেমে এসেছে সাত হাজার ৭৩৫ পয়েন্টে।

মূল্যসূচকের পাশাপাশি শেয়ারের মূল্য ও লেনদেন দুই-ই কমেছে ঢাকার বাজারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে প্রতিদিনের গড় লেনদেন নেমে এসেছে প্রায় এত হাজার ২২৮ কোটি টাকায়। অথচ বিদায়ী বছরের শেষ সপ্তাহে প্রতিদিনের গড় লেনদেন ছিল এক হাজার ৫১৪ কোটি টাকার ওপরে। সে হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে গড় লেনদেন কমেছে প্রায় ২৮৬ কোটি টাকা।
২০১০ সালের শুরুটা হয়েছিল সূচকের ঊর্ধ্বগতি দিয়ে। সেখানে দরপতন দিয়ে ২০১১ সালের যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সালের প্রথম সপ্তাহ শেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক বেড়েছিল ১৫৪ পয়েন্ট। ওই সপ্তাহে পাঁচ লেনদেন দিবসের প্রতিদিনই শেয়ারের দাম ও সূচক একটু একটু করে বেড়েছিল। আর ২০১১ সালের প্রথম লেনদেন দিবসটি শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ও সূচকের ঊর্ধ্বগতি দিয়েই শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরের চার দিনের ধারাবাহিক দরপতন সেই শুভ সূচনাকে ম্লান করে দিয়েছে।
বছরের শুরুতেই টানা দরপতন বিনিয়োগকারীদের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। কয়েক দিনে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবাই এখন বাজার নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। শঙ্কামুক্ত হওয়ার মতো কোনো আশার আলো খুঁজছেন।
এ অবস্থায় অনেকে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বেশি লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে। এদিকে কয়েক দিনের টানা দরপতনে অনেকের পুঁজিতে টান লেগেছে। আবার অনেক বিনিয়োগকারী লাভের একটি বড় অংশই হারিয়ে বসেছেন। যাঁদের লাভের ওপর দিয়ে দরপতনের ঝড় বয়ে যাচ্ছে, তাঁরা পুঁজি হারানোর আগেই বাজার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার সুযোগ খুঁজছেন। এমনি পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মনে আত্মবিশ্বাসের চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে। হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে বিনিয়োগকারীরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, তাঁরা সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য চান।
বাজারের এমনি পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনও (এসইসি)। বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নানামুখী চেষ্টা চালাচ্ছে সংস্থাটি। গত সপ্তাহেই দরপতনের লাগাম টানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চাওয়া হয়। এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকারের অনুপস্থিতিতে সংস্থাটির সদস্য ইয়াছিন আলী গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে এই সহায়তা চান।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশে ফিরেই জরুরি সভা আহ্বান করেন এসইসি চেয়ারম্যান। আজ রবিবার লেনদেন শুরুর আগেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে দুই স্টক এঙ্চেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে এসইসি সূত্র জানিয়েছে। এই বৈঠকে বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে করণীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।
এদিকে টানা চার দিনের দরপতনকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে রাজধানীতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। পুঁজি হারিয়ে শত শত বিনিয়োগকারী রাজপথে নেমে আসেন। বুধ ও বৃহস্পতিবার পরপর দুদিন বিনিয়োগকারীরা রাজধানীর মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও রাস্তায় অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটান। তাতে ওই সড়কে দুদিন যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিনিয়োগকারীদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ার সেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করে। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকালে মতিঝিল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছয়জনকে আটক করে নিয়ে যায়। আটক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
বাজার চিত্র : সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে প্রায় ছয় হাজার ১৪১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে এর পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে এক হাজার ৪২৮ কোটি টাকা বা প্রায় ১৯ শতাংশ। এক সপ্তাহে ডিএসইর সাধারণ সূচক কমেছে প্রায় ৫৫৫ পয়েন্ট। শতাংশ হিসাবে যা ৭-এর কাছাকাছি। আট হাজার ২৯০ পয়েন্টের অবস্থান থেকে গত সপ্তাহের লেনদেন শুরু হয়। আর সপ্তাহ শেষে সেটি নেমে আসে সাত হাজার ৭৩৫ পয়েন্টে। পাশাপাশি লেনদেন হওয়া শেয়ারের দরপতন তো ছিলই। গত সপ্তাহে ডিএসইতে ২৫১ কম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। তার মধ্যে দাম বেড়েছে কেবল ১৪টির। আর ২৩৫টি কম্পানিরই শেয়ারের দাম কমেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। গত সপ্তাহের প্রথম দিনে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল প্রায় তিন লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা। সপ্তাহশেষে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায়।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger