শিক্ষা:শিক্ষায় নৈতিকতা by ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। উন্নয়নের সোপান। কিন্তু শিক্ষা মানে কি? শিক্ষার সংজ্ঞায়নে বেশ ভুল বুঝাবুঝি আছে। অনেক সময় আমরা শিক্ষার প্রকৃত অর্থ বুঝি না। কখনো যা বুঝি, তা ভুল করে বুঝি। এই ভুল বুঝার কারণে কোন কোন দেশে শিক্ষার হার বেশি মনে করি।

কিন্তু সে তথাকথিত শিক্ষা জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে না। সুতরাং শিক্ষার সঠিক সংজ্ঞায়ন প্রয়োজন। গোড়ার কথা হলো, শিক্ষা ও সাক্ষরতা সমার্থক নয়। সাক্ষরতা দ্বারা পেশাগত জ্ঞান বুঝায়। আর শিক্ষা হলো পেশাগত দক্ষতার সাথে এমন গুণাবলীর সমন্বয়, যা মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানায়। এ অর্থে শিক্ষা হলো মানবীয় গুণাবলী সমন্বিত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও পেশাগত দক্ষতা। মানবীয় গুণাবলীর মধ্যে নৈতিকতা হলো সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ গুণ। এই নৈতিকতার অভাবে অনেক সম্ভাবনাময় দেশও পেছনে পড়ে আছে।

নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষা থেকে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষাহীনতা উত্তম। কারণ, পেশাগত দক্ষতা মানুষকে দক্ষ করে তোলে, যার ফলে একজন মানুষ নিজের এবং দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। আবার কেউ যদি দুর্নীতির মাধ্যমে জাতির সর্বনাশ করে নিজ সম্রাজ্য কায়েম করতে চায়, তাও সে দক্ষতার সাথে করতে পারে। একজন অদক্ষ ও মূর্খ চোর দ্বারা বড় চুরি সম্ভব নয়। একজন দক্ষ ও পেশাগত জ্ঞানসম্পন্ন মানুষই বড় ধরনের দুর্নীতি করতে পারে। যে কোন দেশের দুর্নীতিবাজদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, তাতে মূর্খ মানুষের সংখ্যা হবে অত্যন্ত নগণ্য, আর তথাকথিত শিক্ষিতদের সংখ্যাই হবে অধিক।

এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কি? এ সমস্যার সমাধান শিক্ষা বন্ধ করা নয়, বরং শিক্ষার সংস্কার। শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মানবীয় গুণাবলীর সমন্বয় প্রয়োজন। আসলে শিক্ষা হলো একটা ব্যাপক পরিভাষা। কোন বিষয়ের জ্ঞানকে সে বিষয়ে পেশাগত জ্ঞান বলা যায়। যখন এর সাথে নৈতিকতা ও প্রয়োজনীয় মানবীয় গুণাবলীর সমন্বয় হয়, তখনই তাকে শিক্ষা বলা যায়।

কিছুদিন আগে কাতারে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। এতে পৃথিবীর নানা দেশ থেকে শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ ও নীতি নির্ধারক ব্যক্তিত্বগণ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে অংশগ্রহণকারী নির্বাচনে সকল ধর্মের প্রতিনিধিত্বের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। কাজেই সেখানে সকল প্রধান প্রধান ধর্মের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ, শিক্ষানুরাগী ও নীতি নির্ধারকগণ উপস্থিত ছিলেন। যেমন ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, খ্রীষ্টান ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম ও ইহুদী ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বগণ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ থেকে সে সম্মেলনে আমার অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য থাকলেও একটি বিষয়ে সবাই ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তা হলো এই যে, শিক্ষা ব্যবস্থার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বপর্যায়ে নৈতিকতার সমন্বয় প্রয়োজন। এছাড়া কোন সমাজ ও জাতি কাঙ্ক্ষিত মানের উন্নয়ন সম্ভব নয়। দুর্নীতির কারণে শত চেষ্টা সত্ত্বেও উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া আরেকটি বিষয়ে ঐক্যমত স্থাপিত হয়েছে। তা হলো, যে জাতির মানুষ যে ধর্মে বিশ্বাসী তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সে ধর্মভিত্তিক নৈকিতার শিক্ষার সমন্বয় বাঞ্ছনীয়। কারণ, নৈতিকতার সাথে ধর্মীয় ভাবধারার জবাবদিহির বিশ্বাস অন্তভর্ুক্ত হলে সে নৈতিকতার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger