গ্রামীণ ডানোনের বিরুদ্ধে মামলা by আরিফুজ্জামান তুহিন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ভেজাল খাদ্য উৎপাদনের দায়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে মামলা হয়েছে। ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী এ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি সর্বোচ্চ এক বছরের জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন ‘শক্তি দই’-এ ভেজাল ধরা পড়ায় বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী উৎপাদক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ডানোনের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল আলমের আদালতে মামলা করা হয়। মামলা নম্বর ১০/২০১১। সূত্র জানায়, ঢাকা সিটি করপোরেশনের পরীক্ষাগারে শক্তি দইয়ে ভেজাল ধরা পড়ে। আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের মেয়রের পক্ষে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিরুদ্দিনের অনুমোদনক্রমে মামলা দায়ের করেন স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. কামরুল হোসেন। এ মামলায় আরো দুজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা শক্তি দইয়ের পরিবেশক ও বিক্রেতা।
বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৬৯ অনুযায়ী গ্রামীণ ডানোনের স্বত্বাধিকারী হিসেবে এ মামলায় ড. ইউনূসকে সশরীরে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। তাঁকে সমন জারির প্রস্তুতি চলছে।
ডিসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিরুদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন আগে গ্রামীণ ডানোন কম্পানির শক্তি দইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিসিসির পরীক্ষাগারে এ দই পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, দইয়ে যে যে উপাদান যে মাত্রায় থাকার কথা, তা এ পণ্যে নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ দইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর বাজার থেকে আরো কয়েকটি ব্র্যান্ডের দইয়ের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, কেবল শক্তি দই নয়, বাজারের অনেক দই-ই মানসম্মত নয়। ওই সব দইয়ের উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
২০০৬ সালের মার্চে বগুড়ায় ফরাসি কম্পানি ডানোন ও গ্রামীণ ফুডসের যৌথ উদ্যোগে এ প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। সে সময় গ্রামীণ ডানোন ফুডসের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের শিশুদের পুষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখেই শক্তি দই উৎপাদনের পদ্ধতিটি বিশেষভাবে তৈরি করেছেন ডানোনের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের বিশেষজ্ঞরা। এ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন’-এর কারিগরি সহায়তা নিয়েছে বলে প্রচার চালানো হয়। শক্তি দইয়ের উৎপাদন নিয়ে বলা হয়, এ দই ঝোলাগুড় ও চিনি মিশিয়ে গরুর দুধ থেকে উৎপাদিত হয়। শক্তি দইয়ের বিশেষ উপাদান শিশুদের ডায়রিয়ার তীব্রতা ও স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয়। প্রতি ৬০ গ্রাম শক্তি দইয়ে শিশুর প্রতিদিনের ভিটামিন এ, আয়রন, জিংক ও আয়োডিনের ৩০ শতাংশ চাহিদা মেটায় বলে দাবি করা হয়।
দরিদ্র শিশুদের অপুষ্টি দূর করার কথা বলে ২০০৬ সালে শক্তি দইয়ের উদ্বোধনকালে ফরাসি কিংবদন্তি ফুটবলার জিনেদিন জিদানকে ঢাকায় এনেছিল কম্পানিটি। কিন্তু শক্তি দইয়ে ভেজাল শনাক্ত হওয়ার পর কম্পানির প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে তাঁদের দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি।
যুক্তরাষ্ট্রেও জরিমানা গুনেছে ডানোন
বাংলাদেশেই প্রথম ডানোনের বিরুদ্ধে ভেজাল পণ্য উৎপাদনের অভিযোগ উঠেনি, যুক্তরাষ্ট্রেও কম্পানিটিকে মোটা অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়েছে। বিশ্বব্যাপী পুষ্টিমান বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও ডানোনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ভেজাল পণ্য বিক্রি করার দায়ে জরিমানা দিতে হয়েছে। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্য নিউজ ট্রিবিউন ডটকম-এ প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ‘অ্যাক্টিভিয়া চ্যালেঞ্জ’ দিয়ে হজমে উপকারী এক ধরনের দই বাজারজাত করে ডানোন। তাদের দাবি করা তথ্য চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা হয়। মামলায় ডানোন পরাজিত হলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য বিক্রির দায়ে তাদের দুই কোটি ১০ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৩৯টি অঙ্গরাজ্যে ডানোনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। শুধু ওয়াশিংটনেই ডানোনকে চার লাখ ২৫ লাখ ডলার জরিমানা দিতে হয়েছে। ওয়াশিংটনের অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে মামলাটি করা হয়। কোনো খাদ্য উৎপাদনকারীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে এটিই সর্বোচ্চ জরিমানা আদায়ের নজির।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger