ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে ২০০ ভরি সোনা, সাড়ে চার লাখ টাকা চুরি

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শনিবার রাতে রহস্যজনক চুরির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে রক্ষিত ২০০ ভরি স্বর্ণসহ নগদ সাড়ে চার লাখ টাকা লুট হয়েছে। মন্দিরে আপাতত পূজা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চুরির ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মন্দিরের এক নিরাপত্তাকর্মীসহ চারজনকে আটক করেছে।

গত দুই সপ্তাহে রাজধানীর তিনটি মন্দিরে চুরির ঘটনার প্রতিবাদে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি আজ বিকেলে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সামনে ভক্ত সমাবেশ আহ্বান করেছে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ব্যবস্থাপক তপন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, মন্দিরে আনুমানিক ২০০ ভরি স্বর্ণ, নগদ সাড়ে চার লাখ টাকা এবং পাঁচ-ছয় ভরি রুপা ছিল। সবটাই চুরি হয়েছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে পুরোহিত রতন চক্রবর্তী ও নিত্য গোপাল চক্রবর্তী গেট বন্ধ করে মন্দির ত্যাগ করেন। রবিবার ভোর সাড়ে ৬টায় তাঁরা মন্দিরে পৌঁছে দেখতে পান গেটের চারটি তালার মধ্যে তিনটি নেই। বাকি একটি তালাও ছিল ভাঙা অবস্থায়। তাঁরা ভেতরে ঢুকে দেখেন পুরো কক্ষটিই তছনছ করা হয়েছে। দেবীর অঙ্গসজ্জায় ব্যবহৃত কোনো স্বর্ণালঙ্কার নেই। ছয়টি প্রণাম বাক্স ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের চুরির সংবাদ পেয়ে গতকাল সকালেই সেখানে উপস্থিত হন মন্দির কর্তৃপক্ষ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দলও সেখানে যায়। পরে এ ব্যাপারে চকবাজার থানায় মামলা করা হয়।
মন্দির কর্তৃপক্ষ ও ভক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্দিরের আশপাশে রাতের বেলায়ও প্রচুর মানুষের যাতায়াত রয়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় এখন ভক্তদের আনাগোনা কমেছে। তবে নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার মতো কিছু এর আগে ঘটেনি। তারপরও মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য নিযুক্ত ছিল একটি বেসরকারি সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের ছয়জন কর্মী। তারা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করে থাকে। শনিবার রাতে দায়িত্ব ছিল আনিসুর রহমান নামে এক নিরাপত্তাকর্মীর। ভোরে দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল কাইউম নামে আরেক কর্মীর।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আনিসুর দাবি করেছেন, রাত ১২টায় বটতলা মোড়ে খাবার আনতে যাওয়া ছাড়া তিনি মূল গেটে সারা রাত অবস্থান করেছেন। কিন্তু কাউকে মন্দিরে ঢুকতে বা বের হতে দেখেননি।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, এ ঘটনায় মন্দির কর্তৃপক্ষ থানায় একটি মামলা করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মন্দিরের একজন নিরাপত্তাকর্মী ও তিনজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (লালবাগ অঞ্চল) খুরশিদ হোসেন বলেন, আপাতত এ ঘটনাকে চুরি বলেই মনে হচ্ছে। যে চারজনকে আটক করা হয়েছে তাঁরা রাতে মন্দির এলাকার ভেতরই থাকতেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ চুরির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেবনাথ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘গত ১২ ডিসেম্বর বরদেশ্বরী কালীমন্দির ও ২২ ডিসেম্বর জয়কালী মন্দিরে চুরি হয়েছে। জাতীয় মন্দিরসহ এসব চুরির ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
গতকাল তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। বীরেশ চন্দ্র সাহার সভাপতিত্বে ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেবনাথ, সাংবাদিক বাসুদেব ধর, মঙ্গলচন্দ্র ঘোষ, অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি প্রমুখ।
পূজা কমিটির নেতারা বলেন, জতীয় মন্দিরে চুরির পেছনে ষড়যন্ত্র কাজ করতে পারে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনোবল ধ্বংস করতে কোনো মহল পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটাতে পারে।
ঘটনার প্রতিবাদে আজ বিকেল ৪টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এক ভক্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger