জিডিপির ২৪ শতাংশই কালো টাকা __টিআইবি

দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকার পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ থেকে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করছে। মুদ্রা সরবরাহ মডেল অনুযায়ী ১৯৭৫ থেকে ২০০৮ সালে দেশে কালো টাকার (অদৃশ্য অর্থনীতি) গড় আকার ছিল জিডিপির ১০.১ শতাংশ।
এ ছাড়া জনপ্রিয় এমআইএমআইসি পদ্ধতি অনুসারে ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কালো টাকার গড় আকার ছিল ৩৮.১ শতাংশ। পদ্ধতি দুটির গড় হিসাব অনুযায়ী, অর্থনীতিতে জিডিপির ২৪ শতাংশ কালো টাকা। এ হিসাবে ২০০৮ সালের শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকার পরিমাণ প্রায় ৩৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
গতকাল রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ তথ্য তুলে ধরে। ‘বাংলাদেশের অদৃশ্য অর্থনীতি : আকার প্রাক্কলন এবং নীতিসংক্রান্ত প্রভাব’ শিরোনামে এক গবেষণামূলক নিবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। নিবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অর্থনীতি ও ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম কবির হাসান। তবে আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা টিআইবির এই গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। সভাপতির বক্তব্যে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘দেশে দুর্নীতি আছে। সরকারে ক্ষমতাসীন দলও তা মনে করে। দুর্নীতি কমানোর জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’
সভায় কয়েকজন বক্তা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ব্যাপক একটি অংশ রয়েছে অপ্রচলিত খাতে। এ রকম তাত্ত্বিক হিসাবের মাধ্যমে তা তুলে ধরা সম্ভব নয়। তাঁরা মনে করেন, অপ্রচলিত খাতের হিসাব করা সম্ভব হলে দেশের জিডিপির আকার আরো বড় হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নমুনাভিত্তিক জরিপের মাধ্যমে একটি ধারণা তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। এ ছাড়া কোনো গবেষণার মাধ্যমেই কালো টাকার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা সম্ভব নয়।
সভায় সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো অন্যান্য দেশেও দুর্নীতি রয়েছে, বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী ভারত ও চীনেও দুর্নীতি রয়েছে। তবে ওই সব দেশের গবেষক বা সাধারণ মানুষ দেশকে এত গালাগাল করে না, যতটা বাংলাদেশে করে। দেশ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে গেছে। রপ্তানি বাড়ছে। তবে সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি আছে। তা কমাতে হবে। এ জন্য সরকার, অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সব পর্যায়ে ভালো নেতৃত্ব দরকার।’ টিআইবির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভালো কিছু বলেন। দেশকে এত গালাগাল করবেন না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, টিআইবি সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জরিপ করে। এ ছাড়া সংস্থাটির সাক্ষাৎকারভিত্তিক জরিপও ব্যাপকভিত্তিক হয় না। ফলে অনেক সময় জরিপের ফলাফল প্রায় ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে ভুল বার্তা পাঠায়। তিনি টিআইবিকে আরো সতর্কতার সঙ্গে এসব তথ্য প্রকাশের অনুরোধ করেন।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, অর্থনীতিতে কালো টাকা থাকলে ক্ষতি নেই। কারণ টাকাগুলো কোনো না কোনো উপায়ে দেশে বিনিয়োগ হয়। তবে কালো টাকা যেন সাদা টাকাকে ক্ষতি না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কবির হাসান জানান, গবেষণা প্রবন্ধে আয়কর ফাঁকির উদ্দেশে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা থেকে প্রাপ্ত অপ্রকাশিত আয়কে কালো টাকা বা অদৃশ্য অর্থনীতি হিসেবে বোঝানো হয়েছে। তিনটি সমন্বিত গবেষণা পদ্ধতি এবং বাংলাদেশের আর্থিক ও অর্থনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ২০২ জন ব্যক্তির ওপর পরিচালিত জরিপের তথ্য নিয়ে অদৃশ্য অর্থনীতির এ ধারণা তুলে ধরা হয়েছে। ২০১০ সালে ১০ জুন থেকে ১০ জুলাই সময় ধরে জরিপ চালানো হয়। জরিপে তথ্য দাতাদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই অদৃশ্য অর্থনীতিকে দেশের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন।
কালো টাকা নিয়ন্ত্রণ করতে গবেষণা নিবন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে অটোমেশন পদ্ধতির মাধ্যমে সমন্বয় সাধন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাহার, কর আইন সহজীকরণ ও কর ফাঁকির জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা, নীতিনির্ধারকদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়াসহ ১১ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger