মহাকাশের সবচেয়ে ক্ষুদে বিজ্ঞানী

চ্ছা বলো তো দেখি বিজ্ঞানী হতে গেলে কি থাকতে হয়? নিশ্চয়ই ভাবছো বয়স হতে হবে খুব বেশি। নাকের ডগায় একটা মোটা চশমা ঝুলবে আর চুলগুলো সব ধবধবে সাদা হবে, তাই না?
তবে আসল কথাটি কি জানো, বিজ্ঞানী হতে কোনো বয়স লাগে না। শুধু থাকতে হয় ক্ষুরধার বুদ্ধি। সেটা তো যেকোনো বয়সেই থাকতে পারে তাই না? বিশ্বাস হচ্ছে না? হবেই বা কি করে, কানাডায় ক্যাথরিন নামের এক ১০ বছরের ছোট্ট মেয়ে যে একটা আস্ত সুপারনোভা আবিষ্কার করে ফেলেছে, সে খবর কি রাখো? রাখলে নিশ্চয়ই আমার কথায় একমত হবে তোমরা।

তবে প্রশ্ন করতেই পারো- সুপারনোভা কি? সুপারনোভা কি সে সম্পর্কে জানতে হলে যে আবার মহাকাশের অনেককিছুই জানতে হয়। সেসব তো এক কথায় বলা প্রায় দুঃসাধ্য কাজ। তবুও বলছি, সুপারনোভা হচ্ছে- এক ধরনের মহাজাগতিক বিস্ফোরণ। এই বিস্ফোরণের ফলে একটি নক্ষত্র ধ্বংস হয়ে যায়। এতে কৃষ্ণবিবর যাকে আমরা চিনি ব্ল্যাক হোল নামে। তা তৈরি হতে পারে, আবার নিউট্রন তারাও তৈরি হতে পারে। যাই হোক না কেনো, এটি আসলে মহাকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এমন একটি খটমটে জিনিস ঠিক ঠিক আবিষ্কার করে ফেললো এই ১০ বছরের ক্যাথরিন?

ক্যাথরিনের পুরো নাম হচ্ছে- ক্যাথরিন অরোরা গ্রে। তার বাবা পল গ্রে একজন পুরোদস্তুর মহাকাশ বিজ্ঞানী। বাবার কাজ দেখে দেখেই এই কাজ সম্পর্কে একটা আগ্রহ ক্যাথরিনের তৈরি হয়ে গিয়েছিল। পল তার পেশার কারণেই এর আগে তিনটি সুপারনোভা আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু তার মেয়ে ক্যাথরিন তাকে পেছনে ফেলে দিয়েছে এই সুপারনোভা আবিষ্কারের ফলে। পল তার সহকর্মীকে নিয়ে ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এবং সেই সঙ্গে তুলে রাখছিলেন একের পর এক ফটো। এই টেলিস্কোপে তোলা ছবিগুলোর প্রতি ক্যাথরিনের আগ্রহটাও কম নয়। কাজেই যখন পল এবং তার সহকর্মী ডেভিড যখন কাজের জন্য বাইরে বের হয়েছেন এই সময় ক্যাথরিন তার আগ্রহ থেকেই দেখতে শুরু করে একের পর এক তোলা টেলিস্কোপের ছবিগুলো।

হঠাৎ পর পর দুটো ছবিতে খটকা লাগে ক্যাথরিনের। কারণ দুটি ছবি একই আকাশের দুটি ভিন্ন সময়ে তোলা। কিন্তু প্রথম ছবিতে একটি আলোর বিন্দু দেখা যাচ্ছে, যা পরের ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে না। মহাকাশ বিজ্ঞানী বাবার কাছ থেকে তো ছোটোবেলা থেকেই এইসব খুঁটিনাটি বিষয়গুলোর গল্প ক্যাথরিন শুনেছে। কাজেই তার বুঝতে মোটেও সমস্যা হলো না যে এটি একটি সুপারনোভা। তারপর আর কি বাবা বাড়িতে ফেরামাত্র চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ক্যাথরিন জানিয়ে দিলো তার আবিষ্কারের কথা। আর পলও মিলিয়ে দেখলেন যে সত্যিই তাঁর মেয়ে ক্যাথরিন আবিষ্কার করে ফেলেছে একটি নতুন সুপারনোভা। এরপর আরো সব পরীক্ষা নীরিক্ষা করে সব বিজ্ঞানীরাই একমত হলেন যে আসলেই ক্যাথরিন নতুন একটি সুপারনোভা আবিষ্কার করে ফেলেছে। আর এর ফলে ক্যাথরিন বনে গেলো পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদে সুপারনোভা আবিষ্কারক। মহাবিশ্বে সবসময় সুপারনোভা হতে থাকে। কিন্তু তারা খুব কমই আমাদের চোখে পড়ে। সেরকমই একটি বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়েছে ক্যাথরিন। আবিষ্কার করে ফেলেছে একটি সুপারনোভা। ওর কি বয়স খুব বেশি হয়েছে? নাকের ডগায় তো চশমাও নেই। চুল তো পাকেনি একটিও। তারপও তো সে আবিষ্কার করেছে সুপারনোভা। এ জন্যই বলছিলাম যে বিজ্ঞানী হতে গেলে থাকতে হয় ক্ষুরধার বুদ্ধি। তা তোমার বয়স যাই হোক না কেন!
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger