নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহি করতে হবে- পুরোনো নির্বাচনী সংস্কৃতি

যেমন আশঙ্কা করা হয়েছিল, তেমনটিই হয়েছে উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ দফায়। প্রথম দফা নির্বাচনের তুলনায় সংঘাত-সহিংসতা, কারচুপির অভিযোগ ও ভোটকেন্দ্র দখল—সবই ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে পরবর্তী প্রতি দফায়। চতুর্থ দফায় তো তা রীতিমতো ‘কেন্দ্র দখলের’ নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের যে ধারা বাংলাদেশে সূচনা হয়েছিল, তা সম্ভবত এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আরও মুমূর্ষু হয়ে পড়ল।

চতুর্থ দফার নির্বাচনে ভোট হয়েছে ৯১টি উপজেলায়। এর মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪০টি উপজেলায়। মারা গেছেন চারজন। সিল মেরে ভোটের বাক্স ভরা, নির্বাচনী সরঞ্জাম ছিনতাই ও আগুন দেওয়া, এজেন্টদের বের করে দেওয়া, ভোটকেন্দ্র দখল—যে বিষয়গুলো আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতি থেকে বিদায় নিয়েছে বলে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছিলাম, তার সবকিছুরই পুনরাবির্ভাব ঘটল চতুর্থ দফা নির্বাচনে। এবারের উপজেলা নির্বাচনের এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি (?)! এর কৃতিত্ব (?) নির্বাচন কমিশনকে দিতেই হচ্ছে!
কোনো ধরনের নির্বাচনী সহিংসতা, প্রাণহানি, ভোটকেন্দ্র দখল বা কারচুপির অভিযোগ ছাড়াই অসংখ্য নির্বাচনের অভিজ্ঞতা দেশে রয়েছে। গত নির্বাচন কমিশন এর সূচনা করে নির্বাচনী সংস্কৃতিতে এই মৌলিক পরিবর্তনটি আনতে সক্ষম হয়েছিল। বর্তমান নির্বাচন কমিশনও শুরুতে তা বজায় রাখতে পেরেছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এ ধরনের নির্বাচন সম্ভব হলে বর্তমানে তা সম্ভব হচ্ছে না কেন? এই সময়কালে নির্দলীয় বা তত্ত্বাবধায়ক ধরনের সরকার যেমন ক্ষমতায় ছিল, তেমনি দলীয় সরকারও ক্ষমতায় ছিল। এখন পরিস্থিতি পাল্টাল কেন?
বাংলাদেশে নির্বাচনে পুরোনো সংস্কৃতি ফিরে আসার দায় প্রথমত নির্বাচন কমিশনের। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা আগের চেয়ে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তাঁর এই দাবির সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। ভোট যদি শান্তিপূর্ণই হবে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটল কেন? এ রকম ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোট কারোরই কাম্য নয়। নির্বাচনের সময় প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে বাধ্য। তারা যদি প্রশাসনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সেটা তাদেরই ব্যর্থতা।
এটা ঠিক যে এবারের উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দল ও তাদের সমর্থকদের শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি ক্রমাগত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কিন্তু আমরা মনে করি যে একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন দৃঢ় অবস্থান নিতে পারলে সরকার বা সরকারি দল বড় বাধা হয়ে উঠতে পারে না। নির্বাচনে কেন সহিংসতা ও কারচুপি ফিরে আসছে, কেন আগাম আশঙ্কা সত্ত্বেও এসব ঠেকানো যাচ্ছে না, তার ব্যাখ্যা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। যদি সরকারের অসহযোগিতার কারণে তা হয়ে থাকে, তবে সেটাও নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট করে বলতে হবে। এটা না করতে পারলে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন’ বর্তমানে যে মুমূর্ষু দশার মধ্যে রয়েছে, সেটিকে আর বাঁচানো যাবে না।

Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger