এই চেতনা অমর হোক- লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত

বাংলাদেশের ৪৩তম স্বাধীনতাবার্ষিকীতে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রায় তিন লাখ মানুষের সমবেত হয়ে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের ঘটনাটি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়, এতে দেশবাসীর আবেগময় অনুভূতিরও প্রকাশ ঘটেছে। ছাত্র-তরুণ-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাবেশস্থলটি হয়ে উঠেছিল নান্দনিক সৌন্দর্যের প্রতীক।
সবার হাতে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আর মুখে সেই জাতীয় সংগীতের অমর সুরলহরি। তাই মহতী এই আয়োজনের উদ্যোক্তা, বিশেষ করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে আমরা অভিনন্দন জানাই। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার এই ঘটনা জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থানকে আরও অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছে। এর মাধ্যমে লাখো প্রাণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের প্রতি দেশবাসীর গভীর আবেগ ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে। মূর্ত হয়ে উঠেছে আবহমান বাঙালি সংস্কৃতি তথা জাতীয় সংগীতের প্রতি আমাদের গাঢ় শ্রদ্ধাবোধ। উল্লেখ্য, কেবল জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডেই নয়, দেশের সর্বত্র, যে যেখানে ছিলেন, সেখান থেকেই জাতীয় সংগীত গেয়ে তাঁরা নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান যে সংগীত, তার প্রমাণ আমরা পাই ইতিহাসের পরতে পরতে।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ক্ষুদিরামেরা গান গাইতে গাইতে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছেন। ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রসংগীতের প্রচারণা নিষিদ্ধ করলে রাজপথে গান গেয়েই এ দেশের শিল্পী, কবিসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সেই অন্যায় আদেশ রুখে দিয়েছেন।
স্বাধীনতা দিবসে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আমাদের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে যে মেলবন্ধন তৈরি হলো, তাকে আরও এগিয়ে নিতে হবে প্রতিদিনের চিন্তা-কর্মে ও দেশপ্রেমের অবিচল প্রত্যয়ে। আনুষ্ঠানিকতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে এই কালজয়ী সংগীতের মর্মবাণীকে ছড়িয়ে দিতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি যে আমাদের গভীর ভালোবাসা আছে, প্রতিটি দিবসে ও ক্ষণে আমরা তা নিজেরা যেমন তার বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট থাকব, তেমনি অন্যদেরও করব উজ্জীবিত। এই গানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেশকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করে তার অঘ্রানের ভরা খেত দেখে যেমন মুখে হাসি ফোটানোর কথা বলেছেন, তেমনি তার বদনখানি মলিন হলে নয়ন জলে ভাসার বেদনাও প্রকাশ করেছেন।
জাতীয় সংগীতের মর্মবাণী হূদয়ে ধারণ করে মা-রূপ দেশের মুখে যেন সর্বদা হাসি ফুটে থাকে, যেন কখনো তার মুখ মলিন না হয়, সেই লক্ষ্যেই আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। দেশের স্বার্থকে দল ও মতের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। বিভেদ ও বৈরিতার বদলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করতে হবে, সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা ছিল একাত্তরের প্রত্যয়।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger