নেপথ্যে লিভটুগেদার by শর্মী চক্রবর্তী

লিভটুগেদারের বলি হলো জহিরুল। ফোনে পরিচয় হয়েছিল লাভলী নামে এক তরুণীর সঙ্গে। পরিচয় থেকে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। এ বন্ধুত্বই রূপ নেয় ভালবাসায়। শুরু হয় লিভটুগেদার।
স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও ভালবাসার টানে সব  কিছু ভুলে জহিরুল এ সম্পর্ক চালিয়ে যান। সে সম্পর্কই কাল হলো তার। প্রেমিকা লাভলীর প্ররোচনায় আত্মহত্যা করে বসেন জহিরুল।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল জহিরুল-লাভলীর। সবার অগোচরে গড়ে ওঠে এ সম্পর্ক। জহিরুল বিবাহিত ছিলেন। তার স্ত্রী-সন্তান আছে। অন্যদিকে লাভলীও বিবাহিতা। তারও সন্তান রয়েছে। স্বামী থাকেন ইতালিতে। স্বামীর অবর্তমানে এ সম্পর্কে জড়িয়ে যান তিনি। সম্পর্কের এক পর্যায়ে তারা একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত থেকেই ৪-৫ মাস আগে যাত্রাবাড়ী কাউন্সিল রোডের বড়বাড়িতে সাবলেট ভাড়া নেন। নিজেদের পরিচয় দেন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে। এখানে প্রায় সময়ই তারা দু’জনে একসঙ্গে কাটাতেন। জহিরুল লিভটুগেদারের পাশাপাশি স্ত্রী সাজু বেগমের সঙ্গেও সংসার করে আসছিলেন। কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার নাম করে যেতেন লাভলীর কাছে। সন্ধ্যা হলে ফিরে আসতেন বাসায়। এ কারণে জহিরুলের পরিবারের সদস্যরাও বিষয়টি বুঝতে পারেননি। এমনকি তার স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভাল ছিল। কোন অভাব ছিল না তাদের পরিবারে।
গত শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জহিরুল তার বড় ভাই শহিদুলের সঙ্গে ছিলেন। এরপরই ফোন এলে তিনি ছুটে যান লাভলীর বাসায়। সেখানে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে বিকাল সাড়ে ৫টায় শহিদুলের পরিবার জানতে পারে জহিরুল মারা গেছেন। তার পরিবারের দাবি, জহিরুল আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার বড় ভাই শহিদুল জানান, আমরা যাত্রাবাড়ীর শাহজালাল রোড এলাকায় দুই ভাই থাকি। তার স্ত্রী-সন্তান আছে। সুখের সংসার ছিল। এর মধ্যে জহিরুল কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যাবে- এমন কোন কথা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আর তাদের সংসারে এমন কোন ঝামেলাও ছিল না- যে কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারে। তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল জহিরুলের বড় ভাই শহীদুল বাদি হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে কথিত স্ত্রী লাভলীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ আনা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক মাহবুবুল আলম বলেন, তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। প্রাথমিক তদন্তে আমরা ধারণা করছি তারা লিভটুগেদার করতো। লাভলী দাবি করেছেন, তাদের বিয়ে হয়েছে। তবে আমরা এমন কোন কাগজ পাইনি। ঘটনার দিন বিকালে তাদের ঝগড়া হয়। লাভলী চেয়েছিল জহিরুল যেন তার স্ত্রী সাজু বেগমকে তালাক দেয়। কিন্তু জহিরুল সেটা চাচ্ছিল না। এ নিয়ে কোন ব্ল্যাকমেইলের শিকার হতে পারে সে। আমরা বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখছি। তদন্ত পুরোপুরি শেষ হলেই এর আসল কারণ জানা যাবে।
এদিকে ঢামেক হাসপাতালে লাভলী জানান, সে জহিরুলের বিবাহিতা স্ত্রী। গত বছরের ১৩ই আগস্ট জহিরুল তাকে বিয়ে করেছে। বিয়ের কাবিননামাও আছে। ৪-৫ মাস ধরে যাত্রাবাড়ীর ৫ তলা বাসায় সাবলেট থাকেন। কয়েক দিন ধরে পারিবারিক কারণে তাদের ঝগড়া চলছিল। তার দাবি ছিল, প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে হবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। গত শনিবার বিকালেও তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। রাগ করে তিনি নিচে নেমে আসেন। অপেক্ষায় ছিলেন স্বামী তাকে মোবাইল ফোনে কল দেবেন। কিন্তু কল না আসায় কিছুক্ষণ পর আবার বাসায় গিয়ে দেখেন জহিরুল গালায় ফাঁস দিয়েছেন। তারপর তিনি নিজেই স্বামী জহিরুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে লাভলী দুই ধরনের তথ্য দিলে পুলিশের সন্দেহ হয়। সে সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাকে আটক করে। এদিকে জহিরুলের পরিবারের দাবি, তারা লাভলীকে চেনেন না। তিনি তার স্ত্রীও নন। জহিরুলের ঠিকানা ডেমরার কোনাপাড়া। তাদের সন্দেহ, জহিরুলকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে।


Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger