নয়া নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের by কাউসার মুমিন

বাংলাদেশে ৫ই জানুয়ারির একপাক্ষিক নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের পর এই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিশালের সঙ্গে বৈঠক করলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের।
আর প্রথম বৈঠকেই বাংলাদেশের বিতর্কিত নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এবং সরকারের আশু করণীয় সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অবস্থানের এক ‘তেতো স্বাদ’ নিতে হলো রাষ্ট্রদূতকে। বৈঠকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে রাষ্ট্রদূত যত বেশি এই নির্বাচনের পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়ার মাত্রাটাও তত বেশি হচ্ছিল। বাংলাদেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে নয়া সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মিত কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকলেও নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সাফ জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশে যথাশিগগির নয়া নির্বাচন দিতে হবে। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে একটি ইনক্লুসিভ ও ক্রেডিবল নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির পরামর্শ দেয়া হয়েছে সরকারকে।

কিন্তু বৈঠক শেষে রাষ্ট্রদূত নিজে মিডিয়াকে ঠিক বিপরীত তথ্য দিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদেরকে উদ্ধৃত করে সেদিনই বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে ‘হাসিনা সরকারকে বৈধতা দিলো যুক্তরাষ্ট্র’; ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে পুনঃনির্বাচনের কথা বলছে না’। এ বিষয়ে গতকাল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মুখপাত্র এমিলি হর্ন গতকাল দুপুরে এ প্রতিনিধিকে বলেন, মিডিয়ায় প্রকাশিত বক্তব্য যদি রাষ্ট্রদূতের নিজস্ব বক্তব্য হয়ে থাকে, তবে তা রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচ্য বিষয়বস্তুর সঠিক প্রতিফলন নয়, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা, সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিশালের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদেরের বৈঠকে অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় বিষয়াবলীর সঙ্গে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তাগাদার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে দেশটিতে নতুন নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির তাগাদা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত ২৪শে জানুয়ারি সকাল ১০টায় ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিশালের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের। এটি একটি নিয়মিত বৈঠক। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিবেচনায় এ বৈঠকটি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকের পর ওই দিনই বাংলাদেশের একটি অনলাইন বার্তা সংস্থা তার নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধির বরাতে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদেরকে উদ্ধৃত করে ‘হাসিনা সরকারকে বৈধতা দিলো যুক্তরাষ্ট্র’ বলে সংবাদ প্রকাশ করে। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, নিশা দেশাই বিশালের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের জানিয়েছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে পুনঃনির্বাচনের কথা বলছে না’, বরং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের তাগিদ দেয়াটা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক অবস্থান মাত্র। এই সংবাদ ওই দিনই বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকেও ফলাও করে প্রকাশিত হয়।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বাংলা মিডিয়ার পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদেরের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও কোনভাবেই রাষ্ট্রদূতকে পাওয়া যায়নি। আর মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে যেহেতু রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করা হয়েছে সেহেতু দূতাবাসের অন্য কোন কর্মকর্তা এ বিষয়ে কোন রকম মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকি এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার তিনদিন পরও এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দূতাবাসের পক্ষ থেকে মিডিয়ায় প্রকাশিত রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যকে অস্বীকার করা হয়নি।
এরই প্রেক্ষিতে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মুখপাত্র এমিলি হর্ন এক লিখিত বার্তায় এই প্রতিনিধিকে বলেন, ২৪শে জানুয়ারি রাষ্ট্রদূত কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিশাল বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত উদ্বেগের কথা আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বৈঠকে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশাল বাংলাদেশ সরকারকে একটি নতুন নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। এই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, ‘ইনক্লুসিভ’ ও ‘ক্রেডিবল’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রধান প্রধান দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ শুরুর আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে বাংলাদেশে খুব দ্রুত একটি নয়া নির্বাচন বিষয়ে দেশটিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার উপর্যুপরি আহ্বান নিয়ে বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার একটি অংশে বিতর্ক চলছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা কি তার ‘ব্যক্তিগত অতি উৎসাহ’ থেকে এমন অবস্থান নিয়েছেন না কি সত্যি সত্যি তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টের নীতি বাস্তবায়ন করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুখপাত্র এমিলি হর্ন পৃথক এক লিখিত বার্তায় এই প্রতিনিধিকে বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করা এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট ধারাবাহিক ভাবে নির্দিষ্ট অবস্থানে থেকে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কথা অব্যাহতভাবে জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার ভিন্নরকম অবস্থানের সুযোগ নেই। মুখপাত্র বলেন, ‘সকলেরই সুস্পষ্ট ভাবে জানা উচিত, রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত নীতি নয়, প্রেসিডেন্ট ওবামার নীতি বাস্তবায়ন করেন।’
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger