অস্থির রাজনীতি, স্থবির অর্থনীতি by আলী ইদ্‌রিস

সাম্প্রতিককালের হরতাল-অবরোধ ও সহিংসতায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি ও শিল্পোৎপাদনের যেমন অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তেমনি বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ম্লান হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনাবলী দেশকে হানাহানি, মারামারির দেশ হিসেবে তুলে ধরেছে। তদুপরি একতরফা নির্বাচন দেশের গণতন্ত্র চর্চাকে কলঙ্কিত করেছে বিশ্বের দরবারে বিজিএমই-এর এক প্রতিবেদন মতে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প তৈরী পোশাক খাতে উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় ৯,২৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে, রপ্তানি আদেশ কমেছে ৩০-৩৫%, অনেক কারখানার হাতে রপ্তানি আদেশ না থাকায় শ্রমিক ছাঁটাই চলছে অথবা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, কোন কোন কারখানা শ্রমিকদের বসিয়ে না রেখে আগামী জুন-জুলাই মাসের কাজ এখনই শেষ করে ফেলছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তিন মাসের একটি শূন্যতা সৃষ্টি হবে যদি রপ্তানি আদেশ ৭০% কমে যায়। এফবিসিসিআই-এর প্রতিবেদন মতে চামড়া শিল্পে ৭০০ কোটি টাকা, পোল্ট্রিতে ৩৮২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। হিমায়িত খাদ্যে ৩৩% রপ্তানি কমেছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রতি হরতালে ৭৫০ কোটি টাকা, পরিবহন খাতে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ কোটি হিসাবে ২০,০০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে, আবাসন খাতে ৫০% ছাড় দিয়েও ক্রেতা মিলছে না, প্রায় ২০,০০০ ফ্ল্যাট অবিক্রীত পড়ে আছে। এ খাতের ব্যাংক লোন ১৮,০০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণে পরিণত হতে পারে। সব কিছু বিবেচনায় ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন হরতাল-অবরোধে ১৬০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। আমার মতে, লাগাতার হরতাল-অবরোধে প্রতিদিন প্রায় ২০০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। একটানা হরতাল না হলে একদিনের ক্ষতি পরের ৩ দিনে পুষিয়ে নেয়া যায়, কিন্তু লাগাতার হলে সেটা সম্ভব নয়। কারণ সময়সীমা, পচনশীলতা, উৎপাদন ক্ষমতা, পরিবহন ইত্যাদি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সব কিছু বিবেচনা করে এফবিসিসিআই বলেছে ২০১৩ সালে ক্ষতি হয়েছে ১০০,০০০ কোটি টাকা। অঙ্কটির কলেবর দেখলে আতঙ্কিত হতে হয়। এই বিরাট ক্ষতি দায়ী রাজনৈতিক দলগুলো বা ক্ষমতাসীন সরকার পুষিয়ে দিতে পারবে কি? না। তাহলে দেশের ও জনগণের ক্ষতি করার অধিকার তাদেরকে কে দিলো? জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছে দেশের ও জনগণের মঙ্গল সাধনের জন্য, ক্ষতি করার জন্য নয়। বিনিয়োগের পরিস্থিতিও হতাশাব্যঞ্জক। বিদেশী বিনিয়োগ তো নেই-ই, ব্যাংকগুলোতে প্রায় ১,০০,০০০ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে, বিনিয়োগের উদ্যোক্তা পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে কু-ঋণ, খেলাপি ঋণ ও অর্থ কেলেঙ্কারির প্রভাবে ব্যাংকগুলো সুদের হার কমাতে পারছে না, সুদের হার কমালে ব্যাংকগুলোকে লোকসান গুনতে হবে। এর মধ্যে নতুন আরও ৮টি ব্যাংক বাজারে এসে অসম প্রতিযোগিতার আবহ সৃষ্টি করেছে। সুতরাং অর্র্থনীতির প্রাণকেন্দ্র এবং পুঁজি ও ঋণ সরবরাহকারী ব্যাংকিং সেক্টর ঝুঁকির মধ্যে আছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্য ও হতাশার বিষয় যে, দেশটি অর্থনৈতিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে নিচ্ছিল, প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, দারিদ্র্য বিমোচন, জন্ম হার, মিলেনিয়াম লক্ষ্য অর্জন ইত্যাদিতে দ্রুতবেগে অগ্রসর হচ্ছিল, রাজনৈতিক অস্থিরতায় সব কিছু এখন স্থবির হয়ে আছে। এই স্থবিরতা কাটিয়ে উন্নতির পথে গতি পেতে অনেক দিন লেগে যেতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের পরেই বাংলাদেশের অর্থনীতি অগ্রসরমান ছিল, বিরাট আয়তন ও বিশাল জনসংখ্যার দেশ ভারতের প্রবৃদ্ধিও বাংলাদেশের চেয়ে কম ছিল। এবার প্রবৃদ্ধি ৬.৫ থেকে ৬-এ নেমে যেতে পারে। ক্ষমতাসীন সরকারি ও প্রধান বিরোধী দল উভয়ের এখন বিবেক জাগ্রত করা উচিত, যা ক্ষতি হওয়ার হয়েছে, অর্থনীতির ক্ষতি আর নয়। এখন উভয় দলকে সহনশীল হয়ে, ত্যাগ স্বীকার করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger