টেন্ডারবাজি: বগুড়ায় ঠিকাদার খুন, লক্ষ্মীপুরে বাক্স ছিনতাই বরিশালে যুবলীগ নেতাকে পেটালো ছাত্রলীগ

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে টেন্ডার বাক্স ছিনতাই ও বরিশালে টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে যুবলীগ নেতাকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। লক্ষ্মীপুরে টেন্ডার বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ৩ যুবলীগ নেতাকে বহিষ্কার ও কমিটি বাতিল করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে গতকাল উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ে। এ ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। ওদিকে রাত সোয়া নয়টায় বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভেতরে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন আবদুল মজিদ নামে এক ঠিকাদার। দিনব্যাপী টেন্ডারবাজি নিয়ে উত্তেজনার পর রাতে এ ঘটনা ঘটে।

লক্ষ্মীপুর/রায়পুর প্রতিনিধি জানান, রায়পুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২টি প্যাকেজে ৩টি বিদ্যালয়ের প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকার দরপত্রের টেন্ডার বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যান যুবলীগের নেতাকর্মীরা। পরে উপজেলা পরিষদের সামনে টেন্ডার বাক্সটি ভাঙচুর করে তারা। উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রায়পুর উপজেলায় পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ২ প্যাকেজে ৩টি বিদ্যালয়ের প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকার কাজের দরপত্র বিক্রি হয়। বিক্রির শেষ দিন সোমবার পর্যন্ত এ কার্যালয় থেকে ৩৩টি শিডিউল বিক্রি হয়। গতকাল জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল। সে অনুযায়ী সকাল থেকে দরপত্র জমা দিতে থাকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। দুপুর ১২টায় উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান রাসেলের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ঢুকে টেন্ডার বাক্স ছিনিয়ে নেয়। পরে উপজেলা কার্যালয়ের সামনে টেন্ডার বাক্স ভাঙচুর করে জমা পড়া দরপত্রগুলো নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে পুলিশ আটক করতে পারেনি। রায়পুর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান রাসেল বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যুবলীগের কোন সম্পৃক্ততা নেই। যুবলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়। রায়পুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। টেন্ডার বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। রায়পুর থানার ওসি তদন্ত নাছিরুজ্জামান বলেন, রায়পুর উপজেলা পরিষদে টেন্ডার নিয়ে কি সমস্যা হয়েছে এমন একটি খবর শুনেছি। তবে কারা এটার সঙ্গে জড়িত সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে রায়পুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২টি প্যাকেজে ৩টি বিদ্যালয়ের প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকার দরপত্রের টেন্ডার বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে রায়পুর উপজেলা ও পৌর যুবলীগের কমিটি বাতিল করেছে জেলা যুবলীগ। জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সৈয়দ আহমদ ও সদস্য সচিব সালাউদ্দিন টিপু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। অপরদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রায়পুর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান রাসেল, যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফ হোসেন ও পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক সামছুল ইসলাম বাবুলকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, বরিশালে টেন্ডার বাগিয়ে নেয়াকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে জখম করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গতকাল দুপুর ২টার দিকে নগরীর জর্ডন রোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার সোহেব আলম সেজান (৩০)-কে উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ২টার দিকে সেজান এবং বিএম কলেজ ছাত্রলীগের মঈন তুষার গ্রুপের মধ্যে টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তুষার গ্রুপের নেতাকর্মীরা সেজানের ওপর চড়াও হয়। এতে সেজান গ্রুপ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে তাদের ওপর হামলা চালায় তুষার গ্রুপের জুবায়ের আলম, নুর আল সাঈদী, ফয়সাল আহম্মেদ মুন্নাসহ ৭-৮ জন। এ সময় যুবলীগ নেতা সেজানকে পিটিয়ে জখম করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল ও ঝালকাঠিতে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য ১১টি গ্রুপের ৬ কোটি ৭১ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর মধ্যে একটি গ্রুপের ৬১ লাখ টাকার কাজ নাহিদ এন্টারপ্রাইজের নামে বাগিয়ে নেয় তুষার গ্রুপ। এ নিয়ে তুষার এবং সেজান গ্রুপের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। হামলার শিকার সেজান জানান, টেন্ডারবাজিতে বাধা দেয়ায় তুষার তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তার ওপর হামলা চালিয়েছে। এ অভিযোগ অস্বীকার করে তুষার গ্রুপের নুর আল সাঈদী বলেন, বেলা ১২টার দিকে বিএম কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী সোহেল, রাজু ও রিমন সিএসের জন্য ৯৮ হাজার টাকা জমা দিতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে সেজান তাদের বাধা দেয় এবং টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা সেজানকে আটক করে গণধোলাই দিয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভেতরে ঠিকাদার আবদুল মজিদ (৩০)কে সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। তিনি বগুড়া শহরের সুত্রাপুরের মুকুল হোসেনের ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে গত রাত সোয়া ৯ টায়। এলাকাকাসী জানান, একটি টেন্ডারের ঘটনা নিয়ে দিনভর সেখানে উত্তেজনা চলছিল। রাত সোয়া ৯ টায় আবদুল মজিদ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভিতরে গেলে তাকে প্রতিপক্ষ উপুর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বগুড়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির উদ্দিন খান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভেতরে তাকে ছুরিকাঘাত করলে  হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার মৃত্যু হয়।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger