পুলিশের পা ধরেও ভাইকে বাঁচাতে পারলো না স্বর্ণা

সোহানকে যখন কোপাচ্ছিল তখন ফাঁড়ির ভেতরে ছোট বোন স্বর্ণা পুলিশের পা ধরে ভাইকে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানাচ্ছিল। কিন্তু পুলিশ তাৎক্ষণিক সেখানে ছুটে আসেনি। কিছুক্ষণ পর এলো পুলিশ।
কিন্তু তার আগেই বড় ভাই সোহানকে নির্মমভাবে কোপালো ঘাতকরা। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করলো কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলো কলেজছাত্র সোহান। এরপর ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল বিকালে সিলেট নগরীর ভিআইপি রোডে লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোহান ইসলাম সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর সাহানা বেগম সানুর দ্বিতীয় ছেলে। এ ঘটনায় নগরীর কুয়ারপাড় ও খুলিয়াপাড়া এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত সোহান ইসলাম (১৮) সিলেট মদন মোহন কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র এবং খুলিয়াপাড়া ৫২-৪ নম্বর বাসার তাজুল ইসলামের ও সাবেক কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানুর পুত্র। পূর্বশত্রুতার জের ধরে এলাকার লোকদের হাতে সে খুন হয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কামাল আহমদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব হয়। শুক্রবার সোহানের লোকজন কামালকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। কামাল বর্তমানে সিলেট ওসমানী হাসপাতালের ১৩ নং ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। এ ঘটনায় সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলাও হয়েছে। রোববার বিকালে নগরীর জিন্দাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ছোট বোন নুশরাত জাহান স্বর্ণাকে নিয়ে বাসায় ফিরছিল সোহান। লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কাছে পৌঁছলে প্রতিপক্ষ গুলজার ও কামালের  লোকজন তার গতিরোধ করে প্রথমে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে তাকে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। ভাইয়ের উপর হামলার ঘটনার পর স্বর্ণা দৌড়ে ঢোকে পার্শ্ববর্তী লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে। এ সময় সে পুলিশের কাছে ভাইকে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানায়। তবে, ঘটনা বুঝতে না পেরে পুলিশ কর্মকর্তারা কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। এক পর্যায়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের চিৎকারে পুলিশ ফাঁড়ির বাইরে গিয়ে ধাওয়া করলে খুনিরা গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাবেক কাউন্সিলর প্রার্থী গুলজার আহমদের নেতৃত্বে ১৫-১৬ জন হামলা চালিয়ে তাকে খুন করে বলে নিহতের পরিবার দাবি করেছে। নিহতের মা সাবেক কাউন্সিলর সাহানারা বেগম সানু হাসপাতালে ছেলের মৃতদেহ ধরে বিলাপ করছিলেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, গুলজার ও কামালের লোকজন তার ছেলেকে খুন করেছে। তিনি ঘাতকদের ফাঁসি দাবি করেন। পিতা তাজুল ইসলাম ছেলের লাশ দেখে নির্বাক হয়ে গেছেন। তিনি জানান, ওরা এতটা ভয়ংকর কাজ করতে পারে জানা ছিল না। তিনি বলেন, পুলিশ আরও আগে বেরিয়ে এলে হয়তো ছেলেকে বাঁচানো সম্ভব হতো। ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১০-১২ জন লোক মোটরসাইকেল থামিয়ে সোহানের ওপর হামলা চালায়। তাদের হাতে দা-লাঠি সহ ধারালো অস্ত্র ছিল।
 ঘটনার পরপরই তারা খুলিয়াপাড়া ও বিলপাড় এলাকা দিয়ে পালিয়ে যায়। এদিকে, লামাবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মনির জানিয়েছেন, ঘটনা চলাকালেই পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ধাওয়া করে। এ সময় ঘাতকরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ সোহানকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger