প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন এরশাদ

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হওয়ার পর বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দূত হিসেবে বিশেষ কোন সুবিধা নিতে চান না তিনি। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্য সুবিধা নিয়েই তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। মেজর জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করার পর বৃহস্পতিবার দীর্ঘ বিবৃতি পাঠিয়েছেন এরশাদ । এতে তিনি বলেন, বিগত দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে মুছে ফেলে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার উপর একটি গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। অতীতের যত গ¬ানি ভুলে গিয়ে গৌরবময় অধ্যায়কে পথ ও পাথেয় হিসাবে ধরে নিয়ে আমাদের আগামী দিনের পথ চলা শুরু করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই চলার পথে আমাকে যে সহযাত্রীরূপে সাথে নিয়েছেন- আমি তার মর্যাদা রক্ষা করতে সদা সচেষ্ট থাকবো। জাতির স্বার্থে এবং দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নুত রাখার জন্য আমি নিবেদিতভাবে কাজ করে যাবার চেষ্টা করবো।

এরশাদ বলেন, রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের ভাবমূর্তির বিরাট ক্ষতি হয়েছে। জনশক্তি রপ্তানি, তৈরী পোশাক শিল্প খাত, বিদেশী বিনিয়োগ, বাংলাদেশের উপর বহিঃর্বিশ্বের আস্থাÑ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমরা হুমকির মুখে পড়েছি। বিগত সরকার আমলের ব্যাপক অগ্রগতি ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের পরেও রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য জনগণের মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়। আমার বিশ্বাস অচিরেই সেই হতাশা কেটে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে আমার প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে একটি আধুনিক মুসলিম প্রধান গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সু-মহান ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে পেঁৗঁছে দেওয়া। বাংলাদেশ এমন একটি মুসলিম প্রধান দেশ যার প্রতিবেশী কোন মুসলিম দেশ নেই। আমাদের দেশ এগিয়ে চলছে একটি স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে। আমরা শিক্ষা, দীক্ষা ও সংস্কৃতিতে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছি। আমরা অসম্প্রাদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ একটি জাতি। বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের এই ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির বিশাল বাজার ছিল মধ্যপ্রাচ্যে। সেই বাজার প্রায় হারিয়ে গেছে। আমার শাসনামলে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত সুদৃঢ় ছিল। সেখানে আমার ব্যাক্তিগত সম্পর্কও কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরো জোরদার করতে ভূমিকা রেখেছে। আমার বিশ্বাস এবং আস্থাÑ সেই সম্পর্ককে আবার ফিরিয়ে আনতে পারবো। তার ফলে জনশক্তির বাজার ফিরে পাবো।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাত এবং হানাহানির কারণে আমাদের অনেক অর্জন চাপা পড়ে যাচ্ছে। দেশে স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ৬ থেকে এতোদিনে দুই অংকের কোটায় পৌঁছে যেতো। বাংলাদেশকে আর তলাবিহীন ঝুড়ি বলার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের অবস্থান নেক্সটÑইলাভেন থেকে ফ্রন্টিয়ার- ফাইভ এ উন্নিত হয়েছে। তৈরী পোশাক রপ্তানির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। শান্তি মিশনে আমাদের  সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা এসেছে। খাদ্য রপ্তানিও হচ্ছে। মানুষের মাথা-পিছু আয় বেড়েছে। দারিদ্রের হার কমেছে। এখন কোনো মানুষকে আর না খেয়ে থাকতে  হয়না। শিক্ষার হার ও মান বেড়েছে। এইসব অগ্রসরমান বিষয়গুলো জাতীয়ভাবে যেমন প্রচারে আসছেনা তেমনিÑ বহিঃর্বিশ্বেও জানছে না। অপরদিকে অপপ্রচার ও সংঘাতের রাজনীতির কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আস্থা হারাচ্ছে। দেশের বৃহৎ রপ্তানিখাত তৈরী পোশাক শিল্প এখন সংকটের মুখে। এই মুহুর্তে এফডিআই ক্রমহ্রাসমান অবস্থায় চলছে। এখানে আমার একান্ত চেষ্টা থাকবেÑ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে এফডিআই বৃদ্ধি করা। বিদেশী বিনিয়োগের দিক থেকে আমরা মধ্যপ্রাচ্যকে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারি। সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বিশেষ ইপিজেড প্রতিষ্ঠার জন্য আমার প্রস্তাব থাকবে।

তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুর হার রোধ, জনস্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে দেশটি বিশ্ব দরবারে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল সেই দেশকে এখন রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে ইমেজ সংকটে ভুগতে হচ্ছে। কিছু পশ্চিমা মিডিয়া বাংলাদেশের নেতিবাচক বিষয়ের উপরে অধিকতর আলোকপাত করে আমাদের ইমেজ ক্ষুণœ করছে। কোন কোন মহল বাংলাদেশ জঙ্গি রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে বলেও অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছেÑ যা কখনই এদেশে হবেনা। অপপ্রচারের কবলে পড়েও দেশের ভাবমূর্তি অনেক ক্ষুণœ হয়েছে।

এরশাদ বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়ে নিজে কোন ব্যাক্তিগত সুযোগ-সুবিধা চাচ্ছিনা। আমার সরকারী বাড়ি-গাড়িরও প্রয়োজন নেই। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে যেটুকু সুযোগ-সুবিধা আমার প্রাপ্য সেটুকু ভোগ করেই আমি বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই। আমি বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক মন-মানসিকতা, উদার ধর্মীয় মনোভাব বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই। আমি বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই- বাংলাদেশ একটি জঙ্গিবাদমুক্ত, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত এবং রাজনৈতিক হানাহানিমুক্ত একটি দেশ। আমি মনে করি, বাংলাদেশকে একটি আধুনিক মুসলিম প্রধান গণতান্ত্রিক এবং শান্তি প্রিয়, নিরাপদ, ও সহনশীল জাতিগোষ্ঠির দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করতে পারলে আমাদের জনশক্তি রপ্তানি বাড়বে, এফডিআই বাড়বে এবং দেশের অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। আমি সৈনিক হিসেবে দেশের স্বার্থে সবসময় যুদ্ধ করতে প্রস্তুত ছিলাম এবং এখনও দেশের অর্থনৈতিক ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে আমার দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবো। আমি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। এখন আর আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। দেশ-জাতির কল্যাণ এবং মঙ্গল সাধনই আমার জীবনের একান্ত কাম্য ও লক্ষ্য।

Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger