নেতা-কর্মী হত্যার রাজনীতি বন্ধ করুন- আন্দোলন না আক্রোশ?

একতরফা নির্বাচন বন্ধের জন্য বিরোধী দল যে আন্দোলন করছে, তা দেখা যাচ্ছে ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসায় রূপ নিয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে এর ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায়। গত কয়েক সপ্তাহে শিবগঞ্জ উপজেলার টিকরি গ্রামের ২৫টি বাড়ি ও ৩০-৩৫টি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষ দল আওয়ামী লীগ করে বা তাদের ভোট দেয়, এই অপরাধে বেছে বেছে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের এক নেতা পারিবারিক কবরে লুকিয়ে থেকেও রেহাই পাননি, তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যদের ওপরও চলছে হামলা। তাদের ঘরবাড়ি-সহায়সম্পদ পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। অন্যদিকে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপরও চলছে নির্বিচার হামলা। ২০ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ফারুককে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছে। লক্ষ্মীপুরে বিএনপি-সমর্থকদের বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে ভয়াবহ আক্রমণ। এ রকম হত্যা-আক্রমণ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘটছে।
গত শনিবার শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও ছাত্র মৈত্রীর সভাপতিকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়ে মারা হয়। তিনিসহ মোট তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। উগ্রপন্থীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গণ-অংশগ্রহণ ছাড়া গণ-আন্দোলন হয় না। এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটির প্রতি নেতৃত্বকে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে প্রতিপক্ষ দলের ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে আক্রোশ চরিতার্থ করার জন্য যেন হামলা চালানো না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
আন্দোলন আক্রোশে পরিণত হলে তার পাল্টাপাল্টি জের চলতে থাকে। আজ কোথাও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হলে, কাল হয়তো বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপরও নেমে আসবে পাল্টা হামলা। কারণ, পরিস্থিতি সব সময় একই রকম থাকে না। আজ যেখানে এক দলের আধিপত্য, কাল সেখানে শক্তির ভারসাম্য একেবারে উল্টে যাওয়া বিচিত্র নয়।
রাজনীতিতে নৈরাজ্যের কোনো স্থান নেই। গণতন্ত্রের জন্য এ দেশে অনেক আন্দোলন হয়েছে। সেখানে ব্যক্তি-হত্যার বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আক্রোশ মেটানোর জন্য হামলা চালানোর অপকৌশল শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত হয়েছে। কারণ, ওই পথে আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জন করা যায় না। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে অতীতের আন্দোলনের অভিজ্ঞতার আলোকে সুস্থ ধারার আন্দোলনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে; হত্যা বা আগুন দিয়ে নয়।
আন্দোলনকে রাজনীতির প্রথাগত পথ থেকে বিচ্যুত হতে দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে দুই পক্ষের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে হবে। কোনো দলের নেতা বা ব্যক্তিকে হত্যা, তাদের ওপর হামলা বা বাসায়-দোকানে আগুন দেওয়ার মতো হিংসাত্মক তৎপরতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger