অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিন- রাজনীতির নামে নৃশংসতা

যাত্রীসমেত বাসে পেট্রলবোমা মেরে ১৯ জন মানুষকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা যে রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে না, এটা কে না জানে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা যেন এ রকমই!
এ দেশের মানুষের জীবনযাপন আজ এভাবেই জিম্মি হয়ে পড়েছে নৃশংস রাজনৈতিক কৌশলের হাতে। ১৮-দলীয় জোটের তিন দিনের অবরোধের শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনাটির নিন্দা এবং ধিক্কার জানানোর ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন।
নিরীহ ১৯ জন মানুষ, যাঁদের দুজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন, আরও কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের এবং তাঁদের স্বজনদের প্রতি জানাই সান্ত্বনা ও সমবেদনা।
পেট্রলবোমার শিকার হওয়া বাসটি যেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার একটি মডেল। সেটিতে বাসচালক ও তাঁর সহযোগী ছাড়াও ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ—ছাত্র, ব্যাংকের কর্মকর্তা, পুলিশের কনস্টেবল, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। তাঁরা কাজ শেষে ঘরে ফিরছিলেন। কী অপরাধ ছিল তাঁদের? কেন এই নৃশংসতার শিকার তাঁদের হতে হলো?
এমন নৃশংসতার ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে সারা দেশের মানুষ। বিরোধী দলের তিন দিনের অবরোধে নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হয়ে প্রাণ হারালেন ২০ জন। এর আগে গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে তিন দিনের হরতালে এবং এর মাত্র পাঁচ দিনের
মাথায়, এ মাসের প্রথম সপ্তাহে টানা চার দিনের হরতালেও প্রাণহানি ঘটেছে প্রায় ২০ জনের। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে
এ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে তিন শ জন! এ কোন ধরনের রাজনীতি? কিসের জন্য এই রাজনীতি?

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে এসব প্রাণহানির দায় এড়াতে পারে না। কারণ, তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা বলে, কিন্তু শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারে না। নাশকতার ঘটনাগুলোর দায় তারা বরং সরকার ও সরকারি দলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে দায় সারতে চায়। কিন্তু এভাবে দায় সারা যায় না, যাবেও না। বাসে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারা তো গণহত্যার অপচেষ্টার শামিল! নিরীহ সিএনজিচালককে পুড়িয়ে মারা, কিংবা অফিসফেরত মানুষদের বোমা মেরে হত্যা করার মাধ্যমে সরকারকে দুর্বল করার ভাবনা তো সন্ত্রাসবাদীদের অশুভ ভাবনা!

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মানুষ হত্যার ঘটনাগুলো যেন আইনি প্রতিকারের ঊর্ধ্বে থেকে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ এসব অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করে না, বরং তাদের মধ্যে এ ধরনের ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। কিন্তু প্রতিটি সহিংস ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ বিচারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। বিরোধী জোটের যেমন উচিত অবিলম্বে এসব নাশকতা বন্ধ করা, তেমনি সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনায় আইনের যথার্থ প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger