চারুকলা- রূপকথার দেশে by শাশ্বতী মজুমদার

শিশু ও কিশোরদের জীবনের একটি বড় অংশ হলো তার কল্পনার জগৎ। সেখানে মায়ের বকুনি নেই, শিক্ষকের হোমওয়ার্ক নেই। কল্পনার জগতে কখনো তারা আকাশে মেঘের সঙ্গে খেলা করে আবার পানিতে জলকন্যার সঙ্গে গপ্প জুড়ে দেয়। তাদের এই কল্পনার জগৎ আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে যখন তাদের রঙিন ছবি থাকে বইয়ের পাতায়।
বাচ্চাদের ছবিওয়ালা এই ছড়া বা গল্পের বইগুলো হলো দৃশ্যগত এবং টেক্সচুয়াল বয়ান। বাচ্চাদের কল্পনার জগৎকে এই বইগুলো ধারণ করে এবং তাদের সাহিত্যের স্বাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। জার্মানিতে বাচ্চাদের এই বুক ইলাস্ট্রেশন ব্যাপক জনপ্রিয়। সম্প্রতি জার্মানির বিখ্যাত ইলাস্ট্রেটর য়ুলিয়া কার্গেল ঢাকায় এসেছেন। তিনি বাংলাদেশের শিল্পীদের নিয়ে বুক ইলাস্ট্রেশনের ওপর একটি কর্মশালার আয়োজন করেছেন।
বাচ্চাদের বুক ইলাস্ট্রেশন খুব সহজ নয়। ছবিগুলো সাধারণত গল্প বা ছড়া অনুযায়ী আঁকতে হয়। শিশুদের জন্য ছবিগুলোকে অবশ্যই হতে হবে সরল, সহজবোধ্য—সেই সঙ্গে তাদের মনোযোগ ধরে রাখার মতো আকর্ষণীয়। য়ুলিয়া কার্গেল তাঁর কর্মশালায় সমকালীন বুক ইলাস্ট্রেশনের ধারা ও নতুনত্বের দিকে গুরুত্ব দেন। শিল্পীরা একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্পকে ভিত্তি করে ছবি আঁকেন। এই কর্মশালা আট দিন চলে। পরে ১৩ এপ্রিল এই শিল্পকর্মগুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় জার্মান কালচারাল সেন্টারে।
প্রদর্শনীর নাম রাখা হয়েছে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন ফোর কালারস’। শিল্পীরা তাঁদের বিষয় অনুসারে ছবির মাধ্যমে গল্প বলার চেষ্টা করেছেন। এ জন্য শিল্পীরা এক বা একাধিক ছবি এঁকেছেন। ছবিগুলোতে ঘটনা অনুসারে ১, ২ ও ৩ করে নম্বর দিয়ে সাজানো। তাই ছবিগুলো দেখলেই গল্পগুলো আন্দাজ করা যায়। যেমন, ‘মমস ড্রিম’ ছবিটি শিল্পী সৈয়দা তাহলিমা হকের। ছবিতে ছোট্ট মম ও তার পুষি সকালে ঘুম থেকে উঠতে চায় না, কিন্তু মায়ের ডাকে উঠতে হয়। ঢুলুঢুলু চোখে তারা বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ করে। একসময় তারা বাবল তৈরি করে। এরপর এক প্রজাতির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে মম ও তার পুষি বিড়াল এসে পৌঁছায় আজব বাগানে। মম আবিষ্কার করে, তারও প্রজাপতির মতো ডানা আছে, সে উড়তে থাকে। মেঘেদের সঙ্গে খেলা করে, সূর্যও তাদের দেখে হাসে। ছাদের ওপর মমর বন্ধুরা তার দিকে তাকিয়ে থাকে, তাকে ডাকে। এবার মম তার বাড়িতে ফিরতে চায়। এ সময় মমর ঘুম ভেঙে যায়।
শিল্পী আবদুল্লাহ আল বসিরের ‘চিলড্রেনস ডে আউট’ ছবিতে দেখা যায়, বাচ্চারা ঘরে বসে ছবি আঁকছে। একসময় তাদের আঁকা পশু-পাখিগুলো ক্যানভাস থেকে বেরিয়ে আসছে, তাদের সঙ্গে খেলা করছে।
শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ এঁকেছেন ‘ওয়ানস আপন এ টাইম দেয়ার ওয়াজ এ হেন’। রঙের ব্যবহার ও শক্তিশালী ড্রইংয়ের মাধ্যমে তিনি মুরগির গল্প উপস্থাপন করেছেন।
‘কোয়াক ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ: ব্যাঙের ডাক’ ছবিটি এঁকেছেন শিল্পী এলিজাবেথ এ ফাহরি মনসুর। শিল্পী ছবিতে কাগজ কেটে কেটে বিভিন্ন পশু-পাখির ফর্ম তৈরি করে ক্যানভাসে কম্পোজ করেছেন।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger