মেধা, শ্রম আর কাজের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে যে কোন কাজেই সফল হওয়া যায়। সেটা প্রমাণ করেছেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের এক সময়ের দিনমজুর আবুল হোসেন। তিনি আজ থেকে ১৮ বছর আগে দিনমজুরের কাজ শেষে বিকেলে নানা রকম মৌসুমি ফল কিনে কালীগঞ্জ শহরের রাস্তার পাশে বসে বিক্রি করতেন। তখন থেকে তার আশা ছিল জীবনে সুযোগ পেলে নিজে একটা লিচুর বাগান করবেন।
তিনি করেছেনও তাই। আবুল হোসেন প্রথমে অন্যের ও পরে নিজের জমিতে ১৮ বছর ধরে লিচু চাষ করে অভাবনীয় সফলতা অর্জন করে এখন হয়েছেন গাড়ি-বাড়ির মালিক। তার অতীতের অভাব অনটনের দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে ৫০ ঊর্ধ্ব বয়সী আবুল হোসেন জানান, ৫ ভাইবোনের অভাবের সংসারে তিনি সবার বড়। তাই অনেক অল্প বয়সেই তার ওপর সংসারের ভার এসে পড়ে। তাছাড়া ভূমিহীন বাবার পরিবারে অর্থ সংকটের কারণে কোন দিন স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। দরিদ্র পরিবারের মা-বাবাসহ ভাইবোনদের মুখে হাসি ফোটানোর মহাদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দিনের পর দিন তিনি পরের জমিতে কামলার কাজ করে সংসারের খরচ জুগিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে বিকেলে আশপাশের গ্রাম থেকে লিচুসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল কিনে কালীগঞ্জ শহরে রাস্তার পাশে বসে বিক্রি করতেন। এ ব্যবসায় ভালো লাভ পেয়ে দিনমজুরি ছেড়ে শুধু ফলের ব্যবসা করার চিন্তা মাথায় আসে তার। অল্পদিনের মধ্যে মায়ের একটি ছাগল বিক্রি করে কিছু পুঁজি জোগাড় করেন তিনি। উপজেলার ষাইটবাড়িয়া, মথনপুর, সাতগাছিয়া, অনুপমপুরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঝুড়িভর্তি লিচু কিনে মাথায় করে কালীগঞ্জ শহরে হাটচাঁদনির পাশে রাস্তায় বসে বিক্রি করতেন। সঙ্গে সঙ্গে নিজের কোন জায়গা জমি না থাকলেও সবসময় ভাবতেন কিভাবে নিজে একটি লিচু বাগানের মালিক হবেন। প্রায় ৪-৫ বছর এভাবে ব্যবসা করে কিছু টাকার জোগাড় করে তার গ্রামের আবদুল লতিফের কাছ থেকে মোট ১৩ হাজার টাকা দিয়ে ১ একর ৩৭ শতক জমি বন্ধক রাখেন। পরে ২ বছর এ জমিতে অন্য ফসলের চাষ করে কিছু আয় করেন এবং ব্যবসা থেকে রোজগারের টাকা দিয়ে ১৯৯২ সালে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ওই জমিটিই কিনে নেন। এরপর ১৯৯৩ সালে জমিটিতে মোট ৯৯টি লিচুর চারা রোপণ করেন। ২ বছর পরই তার বাগানে লিচু ধরা শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে তিনি চারা গাছ থেকেই খরচ বাদে ১১ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেন। পরের বছর ১৯৯৬ সালে লিচু বাগান থেকে লাভ আসে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ১৯৯৭ সালে খরচ বাদে লাভ পান ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এভাবে প্রতিবছর ক্রমে বাড়তে থাকে তার লাভের পরিমাণ। লিচু চাষের পাশাপাশি লাভের টাকা দিয়ে বড় ছেলে বাবুল আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে কালীগঞ্জ শহরে কাঁচাবাজারে শুরু করেন আড়তদারি ব্যবসা। আবার প্রতিবছর লিচু বাগান থেকে আসতে থাকে বাড়তি টাকা। তিনি গত বছরেও প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছিলেন। এ বছর ইতোমধ্যে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। গাছে এখনো তার অনুমান মতে প্রায় ৩ লাখ টাকার লিচু আছে। মাত্র ১৮ বছরের ব্যবধানে তিনি মাঠে ৯ বিঘা জমি, ২টি ট্রাক ও একটি সুন্দর বাড়ি করেছেন।
লিচু চাষে সফলতা অর্জনকারী আবুল হোসেন জানান, তিনি নতুন করে আরও ৩৭ শতক জমিতে লিচুর চারা এবং ৫১ শতক জমিতে আমের চারা রোপণ করেছেন।
লিচু চাষ সম্পর্কে কালীগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান জানান, এ উপজেলায় যোগদানের পর লিচু চাষ করে সফলতা অর্জনকারী আবুল হোসেনের গল্প তিনি শুনেছেন। তিনি দিনমজুর থেকে লিচু চাষ করে এখন হয়েছেন গাড়ি-বাড়ির মালিক। লাভজনক লিচু চাষের মাধ্যমে তার সফলতা দেখে অনেকে এখন ঝুঁকে পড়ছেন এ চাষে।
লিচু চাষে সফলতা অর্জনকারী আবুল হোসেন জানান, তিনি নতুন করে আরও ৩৭ শতক জমিতে লিচুর চারা এবং ৫১ শতক জমিতে আমের চারা রোপণ করেছেন।
লিচু চাষ সম্পর্কে কালীগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান জানান, এ উপজেলায় যোগদানের পর লিচু চাষ করে সফলতা অর্জনকারী আবুল হোসেনের গল্প তিনি শুনেছেন। তিনি দিনমজুর থেকে লিচু চাষ করে এখন হয়েছেন গাড়ি-বাড়ির মালিক। লাভজনক লিচু চাষের মাধ্যমে তার সফলতা দেখে অনেকে এখন ঝুঁকে পড়ছেন এ চাষে।
+ comments + 1 comments
আসলেই মেধা, শ্রম, আর আর সেই শ্রমের প্রতি মর্যাদা রেখে চললে অবশ্যই ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
দৈনন্দিন সংবাদে জড়িতে সোস্যাল বাংলা News
এই পেজে যেতে পারেন।
এখানে আপনি আরও পাবেন------------
News
Political News
International News
Entertainment News
Education News
Sports News
Business News
Acciedent News etc
Post a Comment