এ ফটোগ্রাফিক গাইড টু বার্ডস অব বাংলাদেশ—লেখক আলোকচিত্রী: রোনাল্ড আর হালদার \ প্রকাশক: বৈকাল \ প্রচ্ছদ: রোনাল্ড আর হালদার \ ২৬০ পৃষ্ঠা \ ছবি: ৭৩৫টি \ ১৬০০ টাকা
বাংলার সাধারণ পাখির নিয়ে বই লিখেছিলেন অজয় হোম। ১৯৬৮ সালের দিকে হারুনুর রশীদ তখনার পূর্ব পাকিস্তানের পাখিদের একটি চেকলিস্ট তৈরি করেছিলেন। ওই লিস্টটি ছিল ধারণার ওপর, মাঠ পর্যায়ের গবেষণা থেকে নেওয়া। ফলে অনেক পাখির নাম ওখানে ছিল, যেটা এ দেশের পাখি নয়। অধ্যাপক কাজী জাকের হোসেন, ড. রেজা খান বাংলাদেশের পাখি নিয়ে লেখালেখি করেছেন। ঢাকার পাখির ওপর বই লিখেছিলেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের কর্মকর্তা হার্ভে। পাখির ওপর লেখালেখি-ছবি প্রদর্শনী করে ইনাম আল হক পাখিপ্রেমীদের সজাগ করেন। তাঁরই তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের পাখির ওপর এশিয়াটিক সোসাইটির ফ্লোরা অ্যান্ড ফনা অব বাংলাদেশ-এর একটি খণ্ডে দেশের অধিকাংশ পাখি নিয়ে একটি সচিত্র বই প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক মনিরুল এইচ খানও দেশের অধিকাংশ পাখিসহ বন্য প্রাণীর ওপর একটি বই প্রকাশ করেছেন। আগেই শরীফ খান বাংলায় পাখির ওপর একটি চমৎকার বই লেখেন।
এত দিন পাখি দেখিয়েরা সালীম আলী ও গ্রিমেটের আঁকা ছবিওয়ালা বই-ই ফিল্ড গাইড হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। তাতে বিশেষ করে ইন্সকিফ-গ্রিমেটের বইয়ের ইলাস্ট্রেসন বেশ বাস্তবানুগ হওয়ায়, পরিবর্তিত আধুনিক ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম যুক্ত হওয়ায় সব পক্ষীবিদই বইটি সঙ্গে রাখছেন।
পক্ষীবিদ সবাইকে আশান্বিত করে এ বছর ১২ জানুয়ারি প্রকাশিত হয় ৭৩৫টি ফটোগ্রাফসহ মোট ৪৭২টি পাখির বাংলা, ইংরেজি, বৈজ্ঞানিক নামসহ রোনাল্ড হালদারের বই এ ফটোগ্রাফিক গাইড টু বার্ডস অব বাংলাদেশ। আকার-আকৃতিতে বইটি পুরোপুরি ফিল্ড গাইডের চাহিদা পূরণ করবে। বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও দেশের অবস্থান ইন্দো হিমালয়ান ও ইন্দো মালয়ান, দুটি উপজৈব ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে পড়ায় উভয় বিভাগেরই পাখি এখানে আসন গেড়েছে অথবা মৌসুমি বিরতি নেয়। দেশের অবস্থান কর্কট ক্রান্তিতে হওয়ায় উত্তর-দক্ষিণের অনেক পরিযায়ী পাখি ক্ষণিক আবাস গড়ে এ দেশে। দেশে তিন ধরনের বনভূমি ও গ্রামীণ জঙ্গল থাকায় এ দেশ পাখির জন্য আদর্শ আবাসস্থল। উত্তর আমেরিকা ও কানাডা মিলে লাখ লাখ বর্গমাইলব্যাপী যেখানে মাত্র সাড়ে আট শ পাখির বাস, সেখানে বাংলাদেশের ৫৫ হাজার বর্গমাইলেই সাড়ে ছয় শ পাখির স্থায়ী বাস ও আসা-যাওয়া করে। গাছবৈচিত্র্য, সহনীয় তাপমাত্রা, বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল, খাদ্যবৈচিত্র্য এত পাখি সমাহারের কারণ।
পাখির মতো ক্ষুদ্র (বড় পাখিও অবশ্য আছে) সদাচঞ্চল, ঋতু আশ্রয়ী ডানায় ভর করা প্রাণীর ছবি তোলা অত্যন্ত দুরূহ। তার ওপর বাংলাদেশে পাখি নিদারুণ নিগ্রহের শিকার। অনেকের কাছে পাখি মানেই সুখাদ্য মাংস হাড়ের স্তূপ—সেখানে পাখির বাস করতে হয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। এই আতঙ্কিত পাখির মানসম্মত ও পরিষ্কারভাবে প্রজাতি, লিঙ্গ চেনা যাবে, এ রকম ছবি তোলা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কাজ। সেটাও দু-চারটি পাখির নয়, ৪৭২ প্রজাতির। যাঁরা কাজটি করছেন অর্থাৎ পাখির ছবি তুলছেন, তাঁরা জানেন, দিনের পর দিন, জঙ্গল থেকে মাঠ-নদী-সমুদ্রের চর, পাহাড় ডিঙিয়ে, নানা ঋতুতে নানা পাখির ছবি তোলা, চেনা কী ধরনের অভিনিবেশের কাজ। পাখির ছবি তোলার লেন্স বেশ ভারী, তেমনি দামিও। নিয়মিত মাঠে যাওয়া সময় ও খরচসাপেক্ষ। অনেক ক্ষেত্রেই রাত যাপন করতে হয় নৌকায় অথবা জঙ্গলে তাঁবু খাটিয়ে। কষ্ট-ক্লেশের এই পথচলায় একটি পাখি যদি নিতান্ত সুযোগ দেয়, তবে তার কয়েকটি ছবি তুললে একটি হয়তো ব্যবহার উপযোগী হয়, কখনো হয় না—একই পাখি আবার খুঁজতে বের হতে হয়। আবার সেই পাখি পেতে বছর পার হয়ে যায়। কোনো কোনো পাখির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অথবা মিলন ঋতুতে দেহের পালকের রঙে পরিবর্তন আসে। একই আকারের উদীয়মান যুবক পাখির সঙ্গে পরিণত বয়সী পাখির রঙের পার্থক্য দেখা যায় অনেক পাখির মধ্যে। এসব ধোঁয়াশার জাল ছিন্ন করে একটি দেশের অধিকাংশ পাখি চিহ্নিত করে সচিত্র বইয়ের পাতায় নিয়ে আসা—নিবেদিতপ্রাণ একজন সাধকই কাজটি করতে পারেন।
একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টির গুরুত্ব কিছুটা অনুধাবন করা যাবে। ভারতে পাখি আছে এক হাজার ২০০ প্রজাতির (সারা পৃথিবীতে ২৫ হাজার) মতো। বহুকাল ধরে সে দেশে পাখিচর্চা হয়। কিন্তু ভারতে প্রাপ্ত প্রায় সব পাখির সচিত্র কোনো বই সে দেশে নেই। আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান—ইনাম আল হক প্রায় সম্পূর্ণ, মনিরুল এইচ খান অনেকটা, রোনাল্ড হালদার আরও সুস্পষ্ট করে সচিত্র পাখির গাইড বই আমাদের দিয়েছেন।
বাংলাদেশের পাখিচর্চার ইতিহাসে দুজন বিদেশি—ডেভিড জনসন ও পল টমসনকে অনেক পক্ষীবিদ গুরু হিসেবে মানেন। রোনাল্ড হালদারের ২৫০ পৃষ্ঠার এ ফটোগ্রাফিক গাইড টু বার্ডস অব বাংলাদেশ বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে ডেভিড জনসনকে। বইটির চমৎকার ভূমিকা লিখেছেন পল টমসন। প্রায় সব ছবিই গ্রন্থাকারের হলেও আরও ২৫ জন পাখি আলোকচিত্রীর ছবি বইটিকে সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করেছে।
বইটি হাতে নিলে প্রত্যেক পক্ষীপ্রেমীর মনে হবে, বইটির অপেক্ষায়ই এত দিন ছিলাম।
এত দিন পাখি দেখিয়েরা সালীম আলী ও গ্রিমেটের আঁকা ছবিওয়ালা বই-ই ফিল্ড গাইড হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। তাতে বিশেষ করে ইন্সকিফ-গ্রিমেটের বইয়ের ইলাস্ট্রেসন বেশ বাস্তবানুগ হওয়ায়, পরিবর্তিত আধুনিক ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম যুক্ত হওয়ায় সব পক্ষীবিদই বইটি সঙ্গে রাখছেন।
পক্ষীবিদ সবাইকে আশান্বিত করে এ বছর ১২ জানুয়ারি প্রকাশিত হয় ৭৩৫টি ফটোগ্রাফসহ মোট ৪৭২টি পাখির বাংলা, ইংরেজি, বৈজ্ঞানিক নামসহ রোনাল্ড হালদারের বই এ ফটোগ্রাফিক গাইড টু বার্ডস অব বাংলাদেশ। আকার-আকৃতিতে বইটি পুরোপুরি ফিল্ড গাইডের চাহিদা পূরণ করবে। বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও দেশের অবস্থান ইন্দো হিমালয়ান ও ইন্দো মালয়ান, দুটি উপজৈব ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে পড়ায় উভয় বিভাগেরই পাখি এখানে আসন গেড়েছে অথবা মৌসুমি বিরতি নেয়। দেশের অবস্থান কর্কট ক্রান্তিতে হওয়ায় উত্তর-দক্ষিণের অনেক পরিযায়ী পাখি ক্ষণিক আবাস গড়ে এ দেশে। দেশে তিন ধরনের বনভূমি ও গ্রামীণ জঙ্গল থাকায় এ দেশ পাখির জন্য আদর্শ আবাসস্থল। উত্তর আমেরিকা ও কানাডা মিলে লাখ লাখ বর্গমাইলব্যাপী যেখানে মাত্র সাড়ে আট শ পাখির বাস, সেখানে বাংলাদেশের ৫৫ হাজার বর্গমাইলেই সাড়ে ছয় শ পাখির স্থায়ী বাস ও আসা-যাওয়া করে। গাছবৈচিত্র্য, সহনীয় তাপমাত্রা, বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল, খাদ্যবৈচিত্র্য এত পাখি সমাহারের কারণ।
পাখির মতো ক্ষুদ্র (বড় পাখিও অবশ্য আছে) সদাচঞ্চল, ঋতু আশ্রয়ী ডানায় ভর করা প্রাণীর ছবি তোলা অত্যন্ত দুরূহ। তার ওপর বাংলাদেশে পাখি নিদারুণ নিগ্রহের শিকার। অনেকের কাছে পাখি মানেই সুখাদ্য মাংস হাড়ের স্তূপ—সেখানে পাখির বাস করতে হয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। এই আতঙ্কিত পাখির মানসম্মত ও পরিষ্কারভাবে প্রজাতি, লিঙ্গ চেনা যাবে, এ রকম ছবি তোলা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কাজ। সেটাও দু-চারটি পাখির নয়, ৪৭২ প্রজাতির। যাঁরা কাজটি করছেন অর্থাৎ পাখির ছবি তুলছেন, তাঁরা জানেন, দিনের পর দিন, জঙ্গল থেকে মাঠ-নদী-সমুদ্রের চর, পাহাড় ডিঙিয়ে, নানা ঋতুতে নানা পাখির ছবি তোলা, চেনা কী ধরনের অভিনিবেশের কাজ। পাখির ছবি তোলার লেন্স বেশ ভারী, তেমনি দামিও। নিয়মিত মাঠে যাওয়া সময় ও খরচসাপেক্ষ। অনেক ক্ষেত্রেই রাত যাপন করতে হয় নৌকায় অথবা জঙ্গলে তাঁবু খাটিয়ে। কষ্ট-ক্লেশের এই পথচলায় একটি পাখি যদি নিতান্ত সুযোগ দেয়, তবে তার কয়েকটি ছবি তুললে একটি হয়তো ব্যবহার উপযোগী হয়, কখনো হয় না—একই পাখি আবার খুঁজতে বের হতে হয়। আবার সেই পাখি পেতে বছর পার হয়ে যায়। কোনো কোনো পাখির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অথবা মিলন ঋতুতে দেহের পালকের রঙে পরিবর্তন আসে। একই আকারের উদীয়মান যুবক পাখির সঙ্গে পরিণত বয়সী পাখির রঙের পার্থক্য দেখা যায় অনেক পাখির মধ্যে। এসব ধোঁয়াশার জাল ছিন্ন করে একটি দেশের অধিকাংশ পাখি চিহ্নিত করে সচিত্র বইয়ের পাতায় নিয়ে আসা—নিবেদিতপ্রাণ একজন সাধকই কাজটি করতে পারেন।
একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টির গুরুত্ব কিছুটা অনুধাবন করা যাবে। ভারতে পাখি আছে এক হাজার ২০০ প্রজাতির (সারা পৃথিবীতে ২৫ হাজার) মতো। বহুকাল ধরে সে দেশে পাখিচর্চা হয়। কিন্তু ভারতে প্রাপ্ত প্রায় সব পাখির সচিত্র কোনো বই সে দেশে নেই। আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান—ইনাম আল হক প্রায় সম্পূর্ণ, মনিরুল এইচ খান অনেকটা, রোনাল্ড হালদার আরও সুস্পষ্ট করে সচিত্র পাখির গাইড বই আমাদের দিয়েছেন।
বাংলাদেশের পাখিচর্চার ইতিহাসে দুজন বিদেশি—ডেভিড জনসন ও পল টমসনকে অনেক পক্ষীবিদ গুরু হিসেবে মানেন। রোনাল্ড হালদারের ২৫০ পৃষ্ঠার এ ফটোগ্রাফিক গাইড টু বার্ডস অব বাংলাদেশ বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে ডেভিড জনসনকে। বইটির চমৎকার ভূমিকা লিখেছেন পল টমসন। প্রায় সব ছবিই গ্রন্থাকারের হলেও আরও ২৫ জন পাখি আলোকচিত্রীর ছবি বইটিকে সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করেছে।
বইটি হাতে নিলে প্রত্যেক পক্ষীপ্রেমীর মনে হবে, বইটির অপেক্ষায়ই এত দিন ছিলাম।
Post a Comment