পোশাক কম্পানিগুলোর নিরাপত্তা প্রসঙ্গ

কটি ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরে ২৬ জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার পর পশ্চিমের ব্র্যান্ড কম্পানিগুলো বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের নিরাপত্তাবিষয়ক অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। হা-মীম গ্রুপের একটি কারখানার নবম তলায় আগুন লাগার ঘটনায় আরো কমপক্ষে ১০০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। এ গ্রুপের হাজার হাজার শ্রমিক গ্যাপ, জেসিপেনি ও ফিলিপ্স-ভ্যান হাউসেনের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য পোশাক তৈরি করে থাকে।

বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, চুরি ঠেকানোর জন্য নিচে নামার দরজায় তালা দেওয়া থাকার কারণে আতঙ্কিত শ্রমিকরা ছাদ থেকে দড়ি বেয়ে নামার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রাণে বাঁচতে ব্যর্থ হন। এ মর্মান্তিক ঘটনার আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সুইডেনের হেনেস অ্যান্ড মরিৎস কম্পানির জন্য সোয়েটার উৎপাদনকারী একটি কারখানা ধসে ২১ শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। এক দশককাল ধরে ব্র্র্যান্ড কম্পানিগুলো উৎপাদনস্থলের পরিবেশ নিয়ে তদারকির যে চেষ্টা করে আসছে, এ আগুনের ঘটনা সে চেষ্টার সীমাবদ্ধতার কথাই প্রমাণ করল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গ্যাপ বছরের প্রথম দিকে হা-মীম গ্রুপের কারখানা পরিদর্শন করেছে। তারা পরিষ্কারভাবেই অগি্নকাণ্ডে বহির্গমনের পথ সুগম করার কথা উল্লেখ করেছিল। সর্বশেষ অগি্নকাণ্ডের ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ আগে পশ্চিমা ব্র্যান্ড কম্পানিগুলোর প্রতিনিধি,কারখানার মালিক, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং শ্রমিক নেতারা পোশাক শিল্পে আগুন লাগার সমস্যা নিরসনে ঢাকায় এক জরুরি আলোচনায় মিলিত হয়েছিলেন। উল্লেখ্য, পোশাক শিল্প বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ
রপ্তানি করে থাকে।
এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য স্পর্শকাতর একটি সময়ে। সম্প্রতি সরকারের মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা নিয়ে শ্রমিক ও কারখানা মালিকদের মধ্যে একটি চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গত নভেম্বর থেকে নতুন ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কিন্তু শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করছেন, কিছু ফ্যাক্টরি কৌশলে মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে এড়িয়ে যাচ্ছে। তারা নিম্ন মজুরির শ্রমিকদের শ্রেণীভুক্ত করে বেতন ও বিভিন্ন ভাতা থেকে বঞ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
চট্টগ্রামে ৭০টি কারখানা বিদেশি ব্র্যান্ড কম্পানির জন্য পোশাক উৎপাদন করে থাকে। গত সপ্তাহে সেখানে পুলিশের সঙ্গে সহিংসতায় তিনজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ২৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
চীনের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যের পোশাক-বাজার বাংলাদেশে চলে আসার পর থেকেই এই শ্রমিক অসন্তোষ লক্ষ করা যাচ্ছে। গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে বাংলাদেশ থেকে ৬ দশমিক ৮ ইউএস ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। হা-মীমে এই অগি্নকাণ্ডের পর কারখানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড কম্পানিগুলো এ দুর্ঘটনার একটি স্বাধীন তদন্ত এবং দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিক ও শ্রমিক-পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানিকারক সব ব্র্যান্ড কম্পানি আগামী সপ্তাহে দেশটির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, সরকার ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের তাগিদ দিয়েছে। পোশাক কম্পানিগুলো অন্যান্য কারখানায় যেন এমন দুর্ঘটনা না ঘটে, তা ঠেকাতে এবং কারখানা নিরাপদ করতে কী করণীয়, তা খতিয়ে দেখার ব্যাপারে অংশগ্রহণের আগ্রহ ব্যক্ত করেছে।
বাংলাদেশের অসংখ্য পোশাক কারখানা এমন সব বহুতল ভবন ব্যবহার করছে, যেগুলো শিল্পের জন্য উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়নি। শিল্প উৎপাদনের জন্য যে ধরনের ভবন প্রয়োজন, তার সঙ্গে এগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। হাজার হাজার মেশিন চলার জন্য যে ভারী বিদ্যুতের সরবরাহ প্রয়োজন, তার সঙ্গে বৈদ্যুতিক সিস্টেম মানানসই নয়; যে কারণে এ বিদ্যুতের অগি্নকাণ্ডের আশঙ্কা দেখা দেয়। শ্রমিকদেরও জরুরি অবস্থায় কী করণীয়, সে বিষয়ে বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণ নেই।
ক্লিন ক্লোথ কম্পানি হিসাব করে দেখেছে, গত পাঁচ বছরে ২০০ পোশাক শ্রমিক অগি্নকাণ্ডে নিহত হয়েছেন। ২০০৫ সালে ৬৪ জন শ্রমিক স্পেকট্রাম কম্পানি ধসে পড়ায় প্রাণ দিয়েছেন।
ব্রিটেনভিত্তিক এথিক্যাল ট্রেডিং ইনেশিয়েটিভের পরিচালক পিটার ম্যাকঅলিস্টার বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এ ঘটনাকে বিপজ্জনক ত্রুটি বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, 'এ রকম প্রতিটি নতুন ঘটনাই বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সংকট আরো ঘনীভূত করছে।'

জোনাথন বির্চাল ও অ্যামি কাজমিন
ফিন্যানশিয়াল টাইমস থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger