ব্যাংকখাতের দরদী চোখ : উন্নয়নের নতুন মাত্রা by ওয়াহিদ মুরাদ

তানুগতিক ব্যাংকিং কার্যধারার বাইরেও ব্যাংসমুহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অত্যাবশ্যকীয় কাজ করতে পারে এবং করে যাচ্ছে। এ নজির আমরা দেখে যাচ্ছি। বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তথা আধুনিকায়নে সহায়তা রাখতে ব্যাংকসমূহ একের পর এক নতুন নতুন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে চলছে।

বলতে দ্বিধা নেই, এসব কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সরসারি পরামর্শ, উপদেশ এবং উদ্যোগ সকল ব্যাংকসমূহকে সাহায্য করছে নিরন্তর। আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধনী ব্যক্তিরা আর্থিক সহায়তা দিয়ে সমাজে অনেক বড় বড় জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সে কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডেরই নতুন দিকমাত্রা কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা দেশে প্রায় ৫০টির মতো সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক কাজ করছে। এদের কর্মকাণ্ড এখন টাকা জমা নেয়া কিংবা ঋণ প্রদান অথবা সে ঋণ আদায় কিংবা বলা যায় বিদেশ থেকে প্রেরিত কষ্টার্জিত রেমিটেন্স সংগ্রহই নয় বরং সমাজের প্রতিটি মানুষের সার্বিক উন্নয়নই এখন ব্যাংকের লক্ষ্য এবং অভীষ্ট। হোক সে গ্রামের অথবা শহরের কোনো লোক। এ লক্ষ্যের ফলেই অবহেলিত অনাদরে বেড়ে উঠা আদিবাসী মানুষরাও পাচ্ছে জীবনে নতুন রঙিন আকাশ। যেখানে তারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে পাঠিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা পাচ্ছে এবং সহায়তা নিচ্ছে।

আদিবাসীদের মাঝে হস্তশিল্পের কাজ ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি আদিবাসীদের শ্রমকে আরো নিরিড়ভাবে কর্মে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে আদিবাসীদের দুঃখের রাত অনেকটাই কেটে যাওয়ার পথে। গ্রাম থেকে উঠে আসা মানুষ শহরে এস হয়ে যায় বস্তিবাসী। সে সব মানুষদের ঋণ সহায়তা দিয়ে পুনরায় গ্রামে ফিরিয়ে দেয়ার মতো মহৎ কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশে কৃষি ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক ভিখারীকে ঋণ দিয়ে কর্মে নিয়োগের ফলে, সব মহল থেকে এ উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ঠোঁট কাটা শিশুদের চিকিৎসা সহায়তা তাদের জীবনে এনে দিয়েছে এক বিশাল মানসিক শক্তি। প্রতিবন্দ্ধী মানুষদের দাঁড়াবার জায়গা ছিল না বললে অতু্যক্তি হয় না। সেই প্রতিবন্দ্ধী মানুষদের বিভিন্ন ধরনের ঋণ সহায়তা দিয়ে স্বানির্ভর করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশের সকল রাষ্ট্রীয় ব্যাংক। এ এক অনন্য নজির ব্যাংক সেবার। এ ধরনের দরদী চোখ নিপতিত হয়েছে গরীব, দুস্থ, অসচ্ছল মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বেলায়ও। যাদের লেখা-পড়ার কোনো সুযোগই হতো না- যদি না ব্যাংকসমূহ শিক্ষা ঋণ দিয়ে (কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুদবিহীন) এগিয়ে না আসতো।

ব্যাংকের উন্নয়নের দরদী ছোঁয়া বিভিন্ন মাধ্যমে দেয়া যেতে পারে। যেমন দেশের যে উপজেলাটি কৃষি উৎপাদনে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে, সে উপজেলাকে চিহ্নিত করে, একটি ব্যাংককে সে দায়িত্বটি দিয়ে দেয়া। অপরপক্ষে যে উপজেলাটি শিক্ষায় কিংবা শিল্পে সবচেয়ে অবহেলিত সেই উপজেলাটিকে চিহ্নিত করে সেখানে একটি ব্যাংক পাঁচ বছর মেয়াদী কিংবা দশবছর মেয়াদী কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। এরকম দায়-দায়িত্ব নিয়ে একটি ব্যাংক যখন কাজ করে সফল হবে তখন একটি জেলাভিত্তিক কর্মসূচী নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। বিষয়টি দেশের সংশিস্নষ্ট সকলের জন্য প্রস্তাব আকারে রাখলাম। যদি এ থেকে কোনো রকম উপকার কোনো মানুষের হয়, যে জন্যই এ প্রস্তাবনা উত্থাপিত হলো।

বর্তমান সময়ে গাভীর দুধের আকাল প্রচণ্ড। বাজারেও এর চাহিদা ব্যাপক। এই দুধের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য একটি উপজেলাকে কিংবা একটি জেলাকে চিহ্নিত করে সংশিস্নষ্ট কৃষক-কৃষাণীদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ঋণ সহায়তার মাধ্যমে জেলাটিকে দুগ্ধে স্বনির্ভর করা সম্ভব বলে মনে করি। এটিও বিবেচনায় নেয়ার জন্য সংশিস্নষ্ট সবার কাছে উদাত্ত আহবান জানাই। কারণ শিশু খাদ্য হিসাবে মায়ের দুধের বিকল্প এই গাভীর দুধই একমাত্র সম্বল। সরকার তথা বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে দরদী চোখ রাখবে বলে আশা রাখি।

আমরা কি জানতাম, আমদানি বিকল্প তৈলবীজ, আদা, ডাল, মুগ, গরম মশলা, ভুট্টা, পিয়াজ, রসুন ইত্যাদি আমদানি করতে বাংলাদেশের মতো একটি গরীব দেশের বছরে প্রায় সাড়ে বারো হাজার কোটি টাকা চলে যেত। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান মাত্র ২% সুদে এ সব ফসলাদি উৎপাদনে ঋণ সহায়তা দিয়ে যাওয়ার যে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তাকি কখনো কল্পনা করা যেত? দেশের রেডিও -টেলিভিশনে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের একটি তৃতীয় চোখ খুলে দিলেন গভর্নর মহোদয়। দেশের সব ব্যাংক যথা সময়ে যথার্থ ব্যক্তিকে যথেষ্ট তদারকির মাধ্যমে স্বচ্ছতার সাথে এ ঋণ সহায়তা যদি দিয়ে যায় তাহলে সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ তৈলবীজ, আদা, ডাল, মুগ, গরম মশলা, ভুট্টা, পিয়াজ, রসুন ইত্যাদি রফতানিকারক দেশে পরিণত হবে।

অত্যন্ত আশার কথা, যেখানে কারো চোখ পড়ে না, সেখানে ব্যাংকের দরদী চোখ পড়তে শুরু করেছে। ফলে ধীরে ধীরে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের পাশাপাশি ব্যাংক এগিয়ে যাচ্ছে একটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে। সে উন্নয়নে জড়িয়ে আছে হতদরিদ্র, দরিদ্র, মধ্যম আয়ের ব্যাপক জনগোষ্ঠী। আমরা আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং উদ্যোগ গ্রহণ করে ১৬ কোটি মানুষের ছোট্ট এ দেশ -বাংলাদেশ একদিন ব্যাপক উন্নয়নের সূর্যালোক গ্রহণ করবে। আমরা সে দিনটির অপেক্ষায় আছি, যে দিন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ সমগ্র এশিয়ার মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সুন্দর বনের বাঘ্রের মতোই। আর সে জন্য আজকের ব্যাংকের নানাবিধ বিভিন্নমুখী কর্মসূচী এবং দরদী চোখ নতুন করে সবার কাছে আলোকবর্তিকা হয়ে ধরা দেবে বলেই আশা করি।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger