দলীয় কোন্দলে ক্ষুব্ধ হাসিনা by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ে ক্ষুব্ধ দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে এ ধরনের ফলাফল এড়ানোর জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের এখনই নিষ্ক্রিয় করতে এবং দল ঘোষিত প্রার্থীদের পক্ষে তাঁদের সমর্থন আদায়ে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

গত বুধবার অনুষ্ঠিত দুই বিভাগের ৭২ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন না করায় এবং পরবর্তী নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা থেকেই দলের হাইকমান্ড বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং দল ঘোষিত প্রার্থীদের পক্ষে সমর্থন আনতে ব্যর্থ হওয়ায় বুধবার অনুষ্ঠিত দুই বিভাগের পৌরসভা নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফল আসেনি বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
পাশাপাশি দল ঘোষিত প্রার্থীদের পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের সমর্থন না থাকাকেও পরাজয়ের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতারা।
জানা গেছে, গত বুধবারের দুটি বিভাগের পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফলে অখুশি শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন এবং নির্বাচনের ফলাফলে তাঁর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি সাধারণ সম্পাদককে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া বাকি বিভাগের পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরানোর জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যেসব পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, তাঁদেরকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না এবং বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে যাঁদেরকে দল থেকে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে না বলেও তাঁর অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে যেসব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা সংশ্লিষ্ট, তাঁদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে দল। এ ছাড়া কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে যদি সেই জেলার নেতারা জড়িত থাকেন, সে ক্ষেত্রে জেলা কমিটি বাতিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, সারা দেশের পৌরসভা নির্বাচন শেষ হলে নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ চিহ্নিত করে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চাওয়া হবে।
পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির সমঝোতা হয় এবং কেন্দ্রীয়ভাবে একক প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। সে সময় ঘোষণা দেওয়া হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং কিছু কিছু জায়গায় বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও দলটি বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরাতে পারেনি।
এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকেও শেখ হাসিনা দলের পরাজয়ের জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদের দায়ী করেছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। তবে বরিশাল বিভাগের পৌর নির্বাচনের ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠে নিষ্ক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের বাসায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষাবলম্বন করায় এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় বহিষ্কার এবং শোকজের ঘটনাও ঘটেছে। কক্সবাজার পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার এবং নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদুল্লাহ এবং সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীকে শোকজ করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রথম দিনের নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রায় সব পৌরসভায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী ছিলেন। মূলত এ কারণে দল প্রত্যাশিত ফল পায়নি। পাশাপাশি দল ঘোষিত প্রার্থীদের ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীরা অনেক ক্ষেত্রে একমত হতে পারেননি। তাঁরা দল সমর্থিত প্রার্থীকে সহযোগিতা করলে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া সম্ভব হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে দল পৌর নির্বাচনে কাক্সিক্ষত ফল পায়নি। তিনি বলেন, ‘দলীয়ভাবে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলেও প্রায় প্রতিটি পৌরসভায়ই বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। আমরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করতে এবং তাঁদের সমর্থন দল ঘোষিত প্রার্থীর পক্ষে আনতে পারিনি।’
উল্লেখ্য, রংপুর বিভাগে মোট ২২টি পৌরসভা নির্বাচনে শুধু দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ ছাড়া সব পৌরসভায়ই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger