স্পেনে বেকারত্ব বাড়ছে by শফিকুর রহমান রয়েল

স্প্যানিশ এমপস্নয়মেন্ট অফিসগুলোর সামনে এতোটা লম্বা লাইন আর কখনোই দেখা যায়নি। ২০০১ সালে বিভিন্ন বাহিনীতে ব্যাপক ছাঁটাইয়ের পর থেকে এই প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যাও পরিপূর্ণ। বন্দুক বেছে নিয়ে আফগানিস্তানে বোমার মুখে পড়াটাকেই বেকারত্ব নিরসনের সবচে কার্যকরী উপায় বলে মনে করা হচ্ছে স্পেনে।

কারণ, সেখানে ৪০ লক্ষ লোক এখন বেকার। গত অক্টোবরে বেকারত্বের হার আরেক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে, অথচ এ সময়টায় বেকারত্ব কমার কথা। শুধু এ মাসেই যুক্ত হয়েছে ৩৬ হাজার নতুন বেকার। ধারণা করা হচ্ছে, স্পেনে বেকারত্বের হার ২০ শতাংশে পেঁৗছুতে পারে।

২৪ মাস আগে বেকারত্ব যখন বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করলো, তখন সমাজতন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী জোসে লুইস রডরিগুয়েজ জাপাটেরো ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন, ২০০৯ সালের শেষ নাগাদ অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু ২০১০ সাল শেষ হয়ে যেতে থাকলেও তার কোন লক্ষণ নেই। ব্যাংক অব স্পেন বলছে, ২০১১ সালের দ্বিতীয়ার্ধের আগে বেকারত্ব কমার কোন সম্ভাবনা নেই। আর সে নাগাদ এর হার ২০ শতাংশ অতিক্রম করতে পারে। এসব শুনে স্প্যানিয়ার্ডরা আতংকিত।

বর্তমানে কাজ না থাকায় সুবিধা গ্রহণ করে ৩০ লাখ ২০ হাজার লোক। ৪ লাখেরও বেশি দীর্ঘকালীন বেকার প্রতিমাসে গ্রহণ করে মাত্র ৪২৬ ইউরো। অভিবাসী ও তরুণদের অবস্থা বেশি খারাপ। স্পেনে পঁচিশ অনূধর্্বদের চলিস্নশ শতাংশেরই কোন কাজ নেই। যা কিনা মহামন্দা আক্রান্ত ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্বিগুণ। রোমান ক্যাথলিক চ্যারিটি 'কারিতাস' -এর মহাসচিব সেবাস্তিয়ান মোরা জানিয়েছেন, স্পেনে তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া লোকের সংখ্যাটা গত দুই বছরে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০০৮ সালের শেষে বেকারের সংখ্যাটা প্রথমবারের মতো যখন তিন মিলিয়নে পেঁৗছুলো, তখন ট্রেড ইউনিয়নের এক সিনিয়র কর্মী বলেছিলেন, ৪ মিলিয়নে পেঁৗছুলে স্পেনে সামাজিক বিপস্নব ঘটে যাবে। রক্ষণশীল অনেক পন্ডিতই মন্তব্য করতে দ্বিধান্বিত হননি যে, এতে করে স্পেনের রাস্তায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেধে যেতে পারে। বেকারদের সংখ্যা ৪ মিলিয়ন অতিক্রম করেছে ঠিকই, কিন্তু সামাজিক বিপস্নব দাঙ্গা-হাঙ্গামার কোন চিহ্ন নেই। এর অবশ্য একটি কারণ রয়েছে। স্পেনের লোকেরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পুলিশের চাকরিটাকে তারা বেশ সম্মানজনক মনে করে। পুলিশের প্রতিটি চাকরির জন্য আবেদনপত্র জমা পড়ে গড়ে ত্রিশটি।

ঐতিহাসিকভাবেই স্পেনের লোকজন বেকারত্ব সম্পর্কে সহনশীল। দৃঢ় পারিবারিক নেটওয়ার্ক বেকারদের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আবার সব বেকারেরই যে কাজ নেই, একথা ঠিক নয়। স্পেনের তেজস্বী ও বর্ধিষ্ণু গুপ্ত (কালো) অর্থনীতির কথা সবাই জানে। ট্যাক্স, ইন্সপেকটরস ইউনিয়ন গেসথা'র তথ্যানুযায়ী, জিডিপিতে গুপ্ত অর্থনীতির অবদান ২৩%। গত বছরও তা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৭ শতাংশ। অনেক বেকারই প্রাতিষ্ঠানিক কাজে ফিরে যেতে ইচ্ছুক নয়। বছরের পর বছর গ্রহণ করছে বেকর ভাতা। স্থায়ী কাজ গ্রহণেও অনেকের রয়েছে অনীহা। কাজেই বেকারত্বের হার সত্যিই কতো, তা বলা খুব মুস্কিল। অন্তত এটুকু বলা যায় যে, সমস্যাটাকে যতোটা তীব্র ভাবা হচ্ছে, আসলে ততোটা নয়।

ইউরোপের মধ্যে স্পেনে শ্রমবাজার সবচে অস্থির। মহামন্দা শুরুর পর থেকে এখানে মানুষ চাকরি হারিয়েছে খুব দ্রুত। কিন্তু তার আগের পরিস্থিতিটা ছিলো যেনো উল্টো; সৃষ্টি হচ্ছিলো অসংখ্য চাকরি, বিশেষত নির্মাণ ক্ষেত্রে। কিন্তু অগণিত বাড়ি অবিক্রীত থাকাতে নির্মাণ শিল্পের অবস্থা এখন করুন। সেজন্যেই স্পেনে বেকারত্বের হার বাড়ছে আমেরিকা ও আয়ারল্যান্ডের চেয়েও দ্রুতগতিতে। স্পেনে ছাঁটাই করাটা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ।

স্পেনের একটি ব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী, দ্বি-স্তর বিশিষ্ট শ্রমবাজারের কারণেই চাকরি হারানোর ব্যাপারটা অহরহ ঘটছে। স্পেনে চাকরি প্রাথর্ীদের এক-তৃতীয়াংশই গ্রহণ করে অস্থায়ী চাকরি। বাকিরা আবদ্ধ হয় স্থায়ী চুক্তিতে। অস্থায়ী শ্রমিকদের বিদায় করে দেয়া যায় জরুরি নোটিসের ভিত্তিতে। ঠিকমতো ক্ষতিপূরণও দেয়া হয় না এসব দেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মিগুয়েল এ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ অর্দোনেজ দাবি জানিয়েছেন শ্রম আইন সংশোধনের।

স্পেনের কার্লোস থ্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমিলিয়ানো কালর্ুসিয়ানো বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে বের করেছেন ভিন্ন তথ্য। স্পেনে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট শ্রম বাজারের পেছনে কাজ করছে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট শিক্ষা। ইউরোপের অন্যান্য বড় দেশগুলোর মতোই এখানে উচ্চশিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে,কিন্তু ৩০ শতাংশ স্প্যানিয়ার্ডই স্কুল ছাড়ে কোন যোগ্যতা অর্জন ছাড়াই। যা কিনা ইউরোপের অন্যঅন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। স্কুল ছাড়া তরুণরা চাকরির বাজারে গিয়ে দারুণ সমস্যার মুখে পড়ে। চাকরি খুঁজে পাওয়াই তাদের জন্য মুস্কিল হয়ে দাঁড়ায়। কোনোমতে একটি পেলেই তাতে লেগে পড়ে। সেই চাকরিটি স্থায়ী না অস্থায়ী সেই চিন্তা করে না। আর সে কারণেই স্পেনের লোকজন সেনাবাহিনীতে ঢোকার জন্য এতোটা উদগ্রীব। কারণ সেখানে তো আর মাস্টার্স ডিগ্রীর প্রয়োজন পড়ে না। অন্যান্য বাহিনীর বেলাতেও ঠিক একই অবস্থা। যা সাধারণত দেখা যায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। সেনা সদস্য হওয়ার জন্য লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger