ইত্তেফাক সাময়িকী ২১ জানুয়ারি সংখ্যার পাঠপ্রতিক্রিয়া

ত্তেফাক সাময়িকী ২১ জানুয়ারি সংখ্যার মূল আয়োজন ছিল নির্বাচিত দশ কবির বইমেলায় প্রকাশিতব্য কবিতার বই থেকে দশটি কবিতা। নির্বাচিত কবিরা হলেন_মুজিব মেহেদী, টোকন ঠাকুর, আশরাফ রোকন, মজনু শাহ, আপন মাহমুদ, মামুন খান, পিয়াস মজিদ, নওশাদ জামিল, বিজয় আহমেদ ও নির্লিপ্ত নয়ন।

এ বিভাগ সম্পর্কে 'আয়োজনটি সুন্দর' বলে প্রথম মন্তব্যটি করেন শামীম আজাদ। এরপরের মন্তব্য মোহাম্মদ নূরুল হকের। মজনু শাহ-এর কবিতা সম্পর্কে তার মূল্যায়নধমর্ী মন্তব্য, 'মৃতু্য' কবিতাটিতে ক্রমবিবর্তমান মানব আচরণ ও প্রাপঞ্চিক ধারণার পরিবর্তনীয় বিষয়ের স্বীকৃতি রয়েছে। এখানে কবি একই সাথে প্রপঞ্চের স্রষ্টা ও দ্রষ্টা। পিয়াস মজিদের কবিতা 'রূপনারাণ' সম্পর্কে তার মত, 'কবিতায় পঙক্তিকে প্রবচনীয় মর্যাদা দানের ক্ষেত্রে তার চেষ্টা মুগ্ধকর। ভাবনায় তাকে রবীন্দ্রনাথের মানসসঙ্গী বলেই ধরে নিয়েছি। প্রকাশে তার স্বাতন্ত্র্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। এখানেই কবির বিশিষ্ট হয়ে ওঠার সোপান। এভাবেই কবি অগ্রজকে আত্মস্থ করে হয়ে ওঠেন নিজেও স্বতন্ত্রস্বর। আনোয়ার শাহাদাতের মন্তব্য, 'সাধারণ উদ্যোগ। তার চেয়েও অসাধারণ কবিতাগুলো।' এরপরের মন্তব্য প্রদানকারী সৈয়দা আমিনা ফারহিন। তার অনুভূতি, 'হাইরাজ ঘেঁষে আসা ফাটকা বাতাস যখন বীথিটার চুল নিয়ে খেলছিল, অদূরেই প্রান্তরে দাঁড়ানো একলা গাছের নিচে দেশলাইয়ে বিড়ি ধরাতে আমি প্রাণান্ত ছিলামঃ',_মুজিব মেহেদীর অাঁকা ছবিটা চোখে লেগে আছে। টোকন ঠাকুরের 'অসম্ভব সম্ভবত সম্ভব হয়ে ওঠার আগ পর্যন্তই অসম্ভব' লাইনটা পড়ে বিস্ময়ে চোখ ঠিকরে আসছে। আবার 'হতে পারে পাখি বা পালক ছিলাম/হঠাৎ খেয়াল করি, আমার কল্পিত ডানায় রোদ বৃষ্টি ধূলোরাই/ ভুল করে ৪১ না লিখে লিখে দিচ্ছে ১৪ বছর' অসাধারণ। মজনু শাহের 'কেনবা একটা করে বেড়াল বসে থাকতে দেখি সমস্ত অধ্যায় শেষে' গায়ে কাঁটা লাগিয়ে দিচ্ছে'। আশরাফ রোকনের 'পোকাদের সংসারে বোকা হয়ে আছি', পিয়াস মজিদের 'ফিরে ফিরে রোববার ঘণ্টা/ কনফেশন। এত হিমমেঘলা স্মৃতি সন্ধ্যা', বিজয় আহমেদের 'বোনরে আমি হারতে চাই নাই। নিমপাতা আনতে গিয়েই দেখা হলো তেঁতুল তলার ভুত্নীর সাথে', নওশাদ জামিলের 'প্রাচীন অক্ষরগুলো ভেসে ভেসে জানিয়ে দিয়েছ/ ভবিতব্যরেখা। জানি ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠাটিই/ শেষ নয়, শুরু', লাইনগুলো উলেস্নখ করে ভাল লাগার কথা জানিয়েছেন। আবার নির্লিপ্ত নয়নের 'আমার ঘরটি গভীর হতে হতে একমুষ্টি রাত ঢুকে পড়লো' পড়ে বিষণ্নতায় ঘরটাই ভেসে যাচ্ছে বলে অনুভূতি ব্যক্ত করেন। মামুন খানের 'ঢেউ ছেড়ে জল-কাদা মল ছেড়ে/ হূদয়ের পাড়ে এসে যখন দাঁড়াও/ মনে হয়, এই প্রথম দেখছি- ভোরের পৃথিবী'কে বলেছেন বড় সি্নগ্ধ। আপন মাহমুদের 'অথচ তার মুখের দিকে/ তাকিয়ে কখনোই মনে হয়নি জীবনে একটাও প্রজাপতি তার/ খোঁপায় বসেছে' কে বড্ড গভীর বলে উলেস্নখ করেছেন। সে সঙ্গে আয়োজন সম্পর্কে অনুভূতি ব্যক্ত করেন অসাধারণ একটা কালেকশন বলে। আলতাফ হোসেন 'খুব ভালো উদ্যোগ' বলে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

'লিটল ম্যাগাজিন আর ব্যবসা এক সঙ্গে হয় না' শীর্ষক আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদের সাক্ষাৎকারের উপর প্রথম মন্তব্যটি মোহাম্মদ নূরুল হকের। তার মতে, আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদের সাক্ষাৎকারের উত্তরগুলো শতভাগ সত্য। সে সাথে এও সত্য, লিটলম্যাগ কখনো কোনো যুগের দাবি মেটায় না, নতুন যুগের সৃষ্টি করে। আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ সম্পাদিত কণ্ঠস্বর যুগের দাবিতে সৃষ্ট একটি কাগজ। যে কাগজ বৈশ্বিক স্রোতের টানে স্বদেশেও একটি স্রোত সৃষ্টির স্বপ্ন দেখেছিল মাত্র। তাই তার কাগজ কোনো যুগ সৃষ্টিতে সমর্থ হয়নি। কথাগুলো তার মুখ থেকে শুনতে পারলেই তার সাহিত্যপ্রেম ও আন্তরিক সততার সাক্ষর পেতাম।' এরপর সাবরিনা আনাম উলেস্নখ করেন, 'সাক্ষাৎকারে তাঁর চিরায়ত পরিশীলিত রুচি ও আদর্শিক চেতনা নিয়ে হাজির হয়েছেন। লিটলম্যাগের বৈশিষ্ট্য সনাক্ত করতে গিয়ে পক্ষান্তরে তিনি লিটলম্যাগ সম্পাদক-লেখকদের জন্য পথ নির্দেশ করেছেন।' জালাদী রায়, 'বরাবরের মতো আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ এখানেও হূদয়গ্রাহী' বলে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।'

একমাত্র গল্পের নাম 'যাপিত জীবন'। লেখক একরামুল হক শামীম। গল্পটি সম্পর্কে মোহাম্মদ নূরুল হক অনুভূতি ব্যক্ত করেন এভাবে, 'খুব সাধারণ ও প্রথাগত একটি গল্প। সংলাপ রচনায় দৌর্বল্য নবিশি গল্পকারদের প্রাথমিক প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও চিরকালীন অনুভবকে সম্মান দেখানোর জন্য গল্পকারকে ধন্যবাদ দিতেই হয়।' ফাতেমা আবেদীন নাজলা, মোহাম্মদ নূরুল হককে উদ্দেশ করে বলেন, 'এই লেখাটা আমার খুব প্রিয় একটা লেখা। এই গল্পটি পড়তে গিয়ে কোথাও থামতে হয়নি। এটাই একটা গল্পের বড় যোগ্যতা হতে পারে।'

এ সংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন ছিল মনির ইউসুফ রচিত 'পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে : দ্বিতীয় দরিয়ানগর কবিতামেলা'। প্রতিবেদনটি সম্পর্কে প্রথম মন্তব্য পাওয়া যায় মোজাফফর হোসেনের। তিনি উলেস্নখ করেন, 'ভালো লাগলো। কবিতা মেলায় থাকতে পারলে আরো ভালো লাগতো।' এরপর মোহাম্মদ নূরুল হক সংশয়সূচক মন্তব্যটি করেন। তার মতে, 'এই উদ্যোগ ভালো। কিন্তু তিনশ কবির মিলনমেলা উলেস্নখ করায় খটকা লাগলো মনে। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার মতো যদি ঘরে ঘরে কবিতার রচনা হিড়িক পড়ে তো কবির ভিড়ে পাঠকের শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃতু্যবরণ করার ঘটনা ঘটলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।' কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার আপাতত সরল মন্তব্যের প্রতিউত্তরে মোহাম্মদ নূরুল হকের স্বরে ঝরে পড়ে কিছুটা বক্রোক্তি, 'ঝাঁকে ঝাঁকে পুঁটি থেকে রুই-কাতলা বের হতেতো কখনো শুনিনি। রুই-কাতলা ঝাঁকে ঝাঁকে চলে না, কবিরাও না। কবির প্রকৃত আরাধনা একার সন্ন্যাসে। প্রকৃত কবি মাত্রই নিভৃতচারী। হাত তুলে শপথ করা কবির কাজ নয়। কবি পাপপুণ্যে বিশ্বাসী নন, তাই তার শপথবাক্য উচ্চারণও অর্থহীন।' এ মন্তব্যের বিপরীতে মুহম্মদ নূরুল হুদার প্রতিউত্তর, 'এক পাতায় ১১জন কবির কবিতা ছেপেছে ইত্তেফাক সাময়িকী। সব কবিতাই আমার কাছে সুপাঠ্য বলে মনে হলো।' এরপর সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব বলেন, 'এ মহতী উদ্যোগের প্রয়াস আরো ব্যাপক আকারে হওয়া উচিত'। ফেসবুকে এ মন্তব্য, প্রতিক্রিয়া চলে মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত। এরপর মন্তব্য-প্রতিক্রিয়াগুলো গ্রন্থনা শুরু হয়। উলিস্নখিত বিভাগগুলো ছাড়াও প্রতিক্রিয়ার বিভাগ নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন মোজাফফর হোসেন।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger