ভিক্ষার পাত্র হাতে অন্ধ-বধির কিংবা বিকলাঙ্গ অনেক শিশুকে দেখিতে পাওয়া যায় শহরাঞ্চলে, জনাকীর্ণ স্থানে। এইসব হতভাগ্য শিশুর কেহ কেহ জন্মগতভাবেই প্রতিবন্ধী। কাহারো কাহারো অঙ্গহানি হয়তো ঘটিয়াছে জন্মের পরে নানান রোগে ভুগিয়া।
কিন্তু ইহার বাহিরেও ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত শিশুদের একটি শ্রেণী রহিয়াছে, যাহারা পথে বসিয়াছে অভাবনীয় নিষ্ঠুরতার শিকার হইয়া। পথে তাহারা ইচ্ছাকৃতভাবে বসিয়াছে, তাহাও বলা যাইবে না। প্রকৃতপক্ষে তাহাদের অপহরণ করিয়া হাত-পা ভাঙ্গিয়া দিয়া কিংবা অঙ্গচ্ছেদন করিয়া বিকলাঙ্গ বানান হইয়াছে। তাহাদের চলৎশক্তিহীন করিয়া হাতে ধরাইয়া দেওয়া হইয়াছে ভিক্ষাপাত্র এবং বসাইয়া দেওয়া হইয়াছে পথে, রেল স্টেশনে, স্টিমারঘাটে অথবা অন্য কোনো জনাকীর্ণ স্থানে। উদয়াস্ত ভিক্ষা করিয়া এই নিষ্পাপ শিশুরা যাহা পায় তাহা চলিয়া যায় নির্দয় দুষ্টচক্রের হাতে। র্যাব সদর দফতরে আহূত এক সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি রক্ত হিম হইয়া আসা এহেন অমানুষিকতার তথ্য প্রকাশ করা হয়। দুইটি মানবাধিকার সংস্থার সহযোগিতায় র্যাব কামরাঙ্গিরচর হইতে এই বর্বরতার হোতাদের একজনকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত পালের গোদাটিকে র্যাব সদর দফতরে সাংবাদিকদের সামনে হাজিরও করা হইয়াছিল। সেখানে সেই-ই তাহাদের এইরূপ অপকর্মের বিবরণ দিয়াছে। দুষ্কৃতকারী এই চক্রটি যে শুধু শিশুদের অপহরণ করিয়া ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করে তাহা নয়, ইহারা মেয়েদেরও তুলিয়া নিয়া গিয়া অনৈতিক কাজে নিয়োজিত করিয়া অর্থ উপার্জন করিয়া থাকে।
এই ধরনের নিষ্ঠুরতার সংবাদে সামান্য মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তিমাত্রই বিমর্ষ-বিচলিতবোধ করিবেন, ইহাই স্বাভাবিক। তবে ইহাও সত্য যে, বিষয়টি বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের এক রূঢ় বাস্তবতা। আর, এই অনভিপ্রেত বাস্তবতার মূলে যে কারণটি ক্রিয়াশীল তাহা আর কিছু নয়, দারিদ্র্যের তীব্র কশাঘাত। বাস্তবিপক্ষেই দারিদ্র্য এক ভয়ংকর অভিশাপ। সত্য বটে, কঠিন দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করিয়াও সমাজের এক বৃহৎ অংশ সাধু জীবন-যাপনের চেষ্টা করিয়া থাকেন। কিন্তু দারিদ্র্যের আরেক ধরনের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়া থাকে অপরাধপ্রবণতা এবং ভিক্ষুক মানসিকতার মধ্য দিয়া। এইজন্যই বলা হইয়া থাকে, দারিদ্র্য মানবজীবনে অনেক ক্ষেত্রে পাপের পথ খুলিয়া দেয়। তৃতীয় বিশ্বের গরীবীলাঞ্ছিত দেশসমূহে ভিক্ষাবৃত্তি করিয়া জীবনধারণ করিয়া থাকে, এমন লোকের সংখ্যা অনুলেস্নখ্য নয়। কালক্রমে তাহারা ভাবিতে ও বিশ্বাস করিতে শুরু করে যে, ভিক্ষাও একটি পেশা। এই কাজ করিয়াও আয়-রোজগার করা যায়। এইরূপ মানসিকতাই দুষ্টচক্রকে নিষ্ঠুর পন্থায় অন্যকে, সমাজের অসহায়দের ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করিয়া আয় করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়া থাকে। যাহারা এহেন নির্দয় পন্থা অবলম্বন করে, তাহারাও যে অর্থনৈতিকভাবে খুব সচ্ছল-সম্পন্ন, তাহা নয়। উহারাও আদতে দরিদ্র, কিন্তু চতুর এবং নিষ্ঠুর।
কাজেই সমস্যাটি মূলত:দারিদ্র্যের। যাহারা অপরাধ করে, যাহারা শিশু ও নারী অপহরণ করে, যাহারা শিশুদের বিকলাঙ্গ করিয়া ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করে, তাহাদের পাকড়াও করিয়া দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি; সে-তো দিতেই হইবে। কিন্তু মূল যে সমস্যা দারিদ্র্য; সেই বৃত্ত হইতেও বাহির হইয়া আসিতে হইবে। উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করিতে না পারিলে এই সমস্যার টেকসই সমাধান অসম্ভব।
এই ধরনের নিষ্ঠুরতার সংবাদে সামান্য মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তিমাত্রই বিমর্ষ-বিচলিতবোধ করিবেন, ইহাই স্বাভাবিক। তবে ইহাও সত্য যে, বিষয়টি বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের এক রূঢ় বাস্তবতা। আর, এই অনভিপ্রেত বাস্তবতার মূলে যে কারণটি ক্রিয়াশীল তাহা আর কিছু নয়, দারিদ্র্যের তীব্র কশাঘাত। বাস্তবিপক্ষেই দারিদ্র্য এক ভয়ংকর অভিশাপ। সত্য বটে, কঠিন দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করিয়াও সমাজের এক বৃহৎ অংশ সাধু জীবন-যাপনের চেষ্টা করিয়া থাকেন। কিন্তু দারিদ্র্যের আরেক ধরনের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়া থাকে অপরাধপ্রবণতা এবং ভিক্ষুক মানসিকতার মধ্য দিয়া। এইজন্যই বলা হইয়া থাকে, দারিদ্র্য মানবজীবনে অনেক ক্ষেত্রে পাপের পথ খুলিয়া দেয়। তৃতীয় বিশ্বের গরীবীলাঞ্ছিত দেশসমূহে ভিক্ষাবৃত্তি করিয়া জীবনধারণ করিয়া থাকে, এমন লোকের সংখ্যা অনুলেস্নখ্য নয়। কালক্রমে তাহারা ভাবিতে ও বিশ্বাস করিতে শুরু করে যে, ভিক্ষাও একটি পেশা। এই কাজ করিয়াও আয়-রোজগার করা যায়। এইরূপ মানসিকতাই দুষ্টচক্রকে নিষ্ঠুর পন্থায় অন্যকে, সমাজের অসহায়দের ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করিয়া আয় করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়া থাকে। যাহারা এহেন নির্দয় পন্থা অবলম্বন করে, তাহারাও যে অর্থনৈতিকভাবে খুব সচ্ছল-সম্পন্ন, তাহা নয়। উহারাও আদতে দরিদ্র, কিন্তু চতুর এবং নিষ্ঠুর।
কাজেই সমস্যাটি মূলত:দারিদ্র্যের। যাহারা অপরাধ করে, যাহারা শিশু ও নারী অপহরণ করে, যাহারা শিশুদের বিকলাঙ্গ করিয়া ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করে, তাহাদের পাকড়াও করিয়া দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি; সে-তো দিতেই হইবে। কিন্তু মূল যে সমস্যা দারিদ্র্য; সেই বৃত্ত হইতেও বাহির হইয়া আসিতে হইবে। উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করিতে না পারিলে এই সমস্যার টেকসই সমাধান অসম্ভব।
Post a Comment