ওএমএসে চালের দাম বাড়ছে

খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া (ওএমএস) চালের দাম প্রতি কেজিতে এক টাকা করে বাড়াচ্ছে সরকার। খাদ্যে ভর্তুকি কমানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন। একই সঙ্গে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের স্বল্পমূল্যে খাদ্যশস্য (রেশন) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি।
গতকাল রবিবার সচিবালয়ে কমিটির বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হলে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ওএমএসের প্রতি কেজি চালের দাম হবে ২৫ টাকা। বর্তমানে ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে খুচরা বাজারে চালের দাম আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে অর্থনীতিবিদরা সরকারকে আরো বেশি চাল আমদানি করে বাজারে ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চাল ও গমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে। এ কারণে খাদ্য কিনতে ভর্তুকি দিতে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন বাজেটের ওপর চাপ পড়ছে। তাই ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ওএমএসের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া চালের দাম প্রতিকেজিতে এক টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে যদি চালের দাম কমে যায়, তাহলে পুনর্নির্ধারিত দাম কার্যকর করা হবে না।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে চতুর্থ শ্রেণীর দুই লাখ ৫৬ হাজার ৬৭৮ জন সরকারি কর্মচারী এবং ৪৫ হাজার ১০ জন গ্রামপুলিশের কাছে প্রতিমাসে স্বল্পমূল্যে ২০ কেজি করে খাদ্যশস্য বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাঁরা ২০ কেজি করে চাল বা গম অথবা দুই ধরনের খাদ্যশস্য কিনতে পারবেন। তবে এর মধ্যে প্রতি পরিবার কত কেজি চাল ও কত কেজি গম পাবে তা নির্ভর করবে সরকারের মজুদের ওপর। প্রতিকেজি চালের দাম হবে ওএমএসের চালের দামের সমান। আর গমের দর হবে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। চলতি মাস থেকেই সরকারি কর্মচারী ও গ্রামপুলিশ স্বল্পমূল্যে চাল-গম কিনতে পারবেন।
ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কোনো সিন্ডিকেট না থাকলেও কারসাজি রয়েছে। তাঁদের নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
দেশে খাদ্য সঙ্কটের কোনো আশঙ্কা নেই বলে আশ্বস্ত করেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। বর্তমানে আট লাখ টন খাদ্য মজুদ আছে। বন্দরে রয়েছে আরো দুই লাখ টন। আরো আড়াই লাখ টন চাল কেনার জন্য ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এপ্রিলের মধ্যে মজুদ ১৫ লাখ টন হবে।’ সরকার দুস্থদেরও রেশনের আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে বলে তিনি জানান। তবে কোন শ্রেণীর কত দুস্থ মানুষকে রেশনের আওতায় আনা হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য কেনার জন্য ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ জন্য সরকারের অনেক উন্নয়ন কর্মসূচির পরিসর ছোট করা হয়েছে। চলতি মাস থেকেই সারা দেশে ১১ লাখ ২০ হাজার দরিদ্র লোককে ফেয়ার প্রাইজ কার্ডের মাধ্যমে মাসে ২০ কেজি করে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে। এ কর্মসূচির আওতায় ২০ কেজি চাল বা গম দেওয়া হবে। ফেয়ার প্রাইজে প্রতিকেজি চালের দাম ২৪ টাকা ও গমের দাম ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মাহবুব হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার ভর্তুকির পরিমাণ কমানোর জন্য ওএমএসের চালের দাম বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্যের দাম আরো বেড়ে গেলে সরকার ঝামেলায় পড়বে।
ড. মাহবুব আরো বলেন, ‘চালের দাম খোলাবাজারে এক টাকা বাড়ানোর কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ার কথা নয়। তারপরও আমাদের দেশে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। কারণ ব্যবসায়ীরা অনৈতিকভাবে দাম বাড়ান।’
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, এক টাকা বাড়ানোর কারণে খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ার কথা নয়।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger