বিক্ষোভ-সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ মিসর

মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল শনিবারও মিসর ছিল অগ্নিগর্ভ। কারফিউ উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ দেশটির সব বড় শহরে বিক্ষোভ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মন্ত্রিসভা ভেঙে দিলেও মুবারক তাঁর নিজের পদত্যাগের দাবি নাকচ করে দেওয়ার খবর বিক্ষোভকারীদের আরো উত্তেজিত করে তোলে।

গতকাল রাত ১০টার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাজধানী কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া, ইসমাইলিয়া, সুয়েজসহ পুরো দেশে রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা অবস্থান করছিল। গতকাল কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। গত শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত ৭৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি। কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা মেনা জানায়, দেশের সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান ওমর সোলাইমান ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ৩০ বছরের শাসনামলে মুবারক এই প্রথম এ পদে কাউকে নিয়োগ দিলেন। এ ছাড়া সাবেক বিমানমন্ত্রী আহমাদ শফিককে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হোসনি মুবারক তাঁকে নতুন সরকার ঠিক করতে বলেছেন। এদিকে মুবারক তাঁর কাছের লোকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছেন বলেও খবর দিয়েছে মেনা। বিক্ষোভ পরিস্থিতির কারণে আজ শেয়ারবাজার এবং সব ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মহল। দেশটির সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মুবারকের প্রতি সংযত আচরণের আহ্বান জানিয়েছে। তারা আরো বলেছে, মিসরের রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য এটিই উপযুক্ত সময়। তবে সৌদি আরব মুবারকের পক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে।
সহিংসতার কারণে বিভিন্ন দেশ মিসর ভ্রমণের ওপর সতর্কতা জারি করেছে। হাজার হাজার বিদেশি মিসর ছাড়তে বিমানবন্দরে ভিড় করে আছে বলে গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
সম্প্রতি তিউনিসিয়ায় সফল গণ-আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মুবারকের পদত্যাগের দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে মিসরে বিক্ষোভ শুরু হয়। ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এ একনায়কের বিরুদ্ধে এটি প্রথম বড় কোনো আন্দোলন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর মুবারকের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এড়িয়ে ইন্টারনেটে প্রচারের মাধ্যমে এ বিক্ষোভ আয়োজন করে তরুণরা। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই মঙ্গলবার থেকে দেশটির সব শহরে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে তারা। বিক্ষোভকারীরা শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে সর্বাÍক আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দেয়। এ পরিস্থিতিতে সন্ধ্যায় কারফিউ জারি করা হলেও জনগণ রাতভর রাস্তায় অবস্থান নেয়। তারা ক্ষমতাসীন দলের প্রধান কার্যালয় জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় দেশটির প্রধান জাদুঘর কায়রো মিউজিয়ামেও অগ্নিসংযোগের আশঙ্কা দেখা দেয়। রাতেই মিসরের প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন। তবে বিক্ষোভকারীরা বলছে, তাদের একটিই দাবি, মুবারকের পদত্যাগ।
শেষরাতের দিকে অনেক বিক্ষোভকারী ঘরে ফিরে গেলেও গতকাল সকাল হতেই তারা আবারও রাজপথে নেমে আসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেনাবাহিনী বলেছে, রাতে কারফিউ লঙ্ঘন করা হলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। মিসরের তথা বিশ্বের গৌরব পিরামিডগুলো রক্ষায় গাজা উপত্যকায় সাঁজোয়া যান নিয়ে সেনাবাহিনী সুরক্ষা দেয়াল গড়ে তুলেছে।
এদিকে গতকাল বিকেলে কারফিউ উপেক্ষা করে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী কায়রোর প্রাণকেন্দ্রে ঢুকে পড়ে পার্লামেন্ট ভবনের দিকে এগোতে থাকলে সেনাবাহিনী তাদের বাধা দেয়। এ সময় লুটপাট ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট, গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দিকে এগুতে থাকলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে অন্তত পাঁচ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে সিনিয়র এক নেতা টিভি সাক্ষাৎকারে বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে জানিয়ে দেশের জনগণকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কথা চিন্তা করে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। এ সময় সেনাবাহিনীকে যেকোনো মূল্যে সহিংসতা মোকাবিলা করে মিসর রক্ষায় সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। দলের পক্ষ থেকে শিগগিরই নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণার কথা জানান তিনি।
অন্যদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর একাংশ জনগণের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মিসরে সহিংসতা কমাতে দেশবাসীকে নিজেদের এবং দেশকে রক্ষার আহ্বান জানায়।
এ বিক্ষোভে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার অস্ট্রিয়া থেকে দেশে ফেরেন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান মোহামেদ এল বারাদি। আগের তিন দিন নিষ্ক্রিয় থাকা মুসলিম ব্রাদারহুডও শুক্রবারের বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই বেশির ভাগ স্থানে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিলেও গতকাল তা খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ফেইসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট বন্ধ রয়েছে। সূত্র : বিবিসি, আল জাজিরা, এএফপি।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger