জাহাজভাঙা শিল্প বনাম পরিবেশ ও মানুষ

জাহাজভাঙা শিল্প নিয়ে বিতর্কের গ্রহণযোগ্য একটি মীমাংসা করেছে উচ্চ আদালতের একটি রায়। শিল্পটি থাকবে; কিন্তু পরিবেশের দূষণ ও শ্রমিকদের প্রাণহানি দুটোই বন্ধ হবে—গত বুধবার দেওয়া উচ্চ আদালতের রায়ের সারমর্ম এটাই।

জাহাজভাঙা শিল্পের মালিকদের ক্রমাগত আইন ভঙ্গ এবং পরিবেশ ও শ্রমিকস্বার্থের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সুরাহা করার আইনি ভিত্তি এর মাধ্যমে গঠিত হলো। এখন শিল্পটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার এবং সরকারের পরিবেশ, শিল্প ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে, নিজ নিজ ক্ষেত্রে রায়টির প্রতিফলন হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা এক আবেদনের ভিত্তিতে উচ্চ আদালত এই রায় দেন। রায়ের অন্য অংশগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। তাতে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে রসায়নবিদ, পরিবেশবিদ, পদার্থবিদ, আইনবিদ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কমিটিতে যাতে শ্রমিক ও মালিক-প্রতিনিধিরাও থাকেন, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্বের অনেক দেশেই জাহাজভাঙা শিল্প নিষিদ্ধ। ইউরোপ-আমেরিকাসহ সেসব দেশের বাতিল ও বিষাক্ত জাহাজের কবল থেকে রেহাই পাওয়ার লাভজনক পথ হলো বাংলাদেশে তা বিক্রি করা। জাহাজ কেটে লোহা বের করার প্রক্রিয়ায় এসব বর্জ্য ও রাসায়নিক সাগর, মাটি ও বায়ুকে ভয়ানকভাবে দূষণ করে। অন্যদিকে জাহাজ কাটতে গিয়ে বিস্ফোরণ ও গ্যাসের শিকার হয়ে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ কেন উন্নত বিশ্বের বাতিল জাহাজ ও বর্জ্যের ভাগাড় হবে। অন্য দিক থেকে এই শিল্পের মাধ্যমেই দেশের ইস্পাতশিল্প দাঁড়িয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের লোহা ও ইস্পাতের চাহিদাও তারা মেটাচ্ছে। সে কারণে শিল্পটির টিকে থাকাও প্রয়োজন এবং তার জন্যই প্রয়োজন একে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা।
এ কারণেই উচ্চ আদালতের নির্দেশ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১০-এর পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি বাতিল জাহাজ আমদানির সময় রপ্তানিকারক দেশ থেকেই সেসবের বর্জ্য পরিশোধনের নির্দেশও দেওয়া হয়। পরিবেশ ও মানুষের কম ক্ষতি করেও এই শিল্প লাভজনকভাবে চলতে পারে। উচ্চ আদালত তা-ই দেখিয়ে দিল। আইনের ফাঁকফোকর গলে যাতে কোনোভাবেই বিষাক্ত বর্জ্যবাহী জাহাজ এ দেশে আসতে না পারে, কিংবা শ্রমিকদের অনিরাপদ কর্মপরিবেশ চলতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে মন্ত্রণালয়গুলোকেই।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger