কোকোর দুর্নীতি জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের হ্যান্ডবুকে

জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের একটি যৌথ প্রকাশনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কয়েক লাখ ডলার আত্মসাতের প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তর (ইউএনওডিসি) এবং বিশ্বব্যাংকের সমন্বিত উদ্যোগ-স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি ইনিশিয়েটিভের প্রস্তুত করা একটি পুস্তিকায় সিমেন্স কম্পানির কাছ থেকে কোকোর ঘুষ গ্রহণের অভিযোগকে 'জাতীয় মুদ্রা সরানোর' উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
'অ্যাসেট রিকভারি হ্যান্ডবুক_এ গাইড ফর প্র্যাকটিশনার্স' নামের পুস্তিকাটি গত ১৬ ডিসেম্বর ভিয়েনায় প্রকাশ করা হয়। ২৭০ পৃষ্ঠার পুস্তিকায় বলা হয়েছে_ঘুষ, অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতিবছর দুই হাজার থেকে চার হাজার কোটি ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এর মধ্যে গত ১৫ বছরে মাত্র ৫০০ কোটি ডলার উদ্ধার করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশে ফিরিয়ে দেওয়া গেছে। বেহাত হওয়া অর্থ উদ্ধার প্রচেষ্টা জোরদার করার বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ওই পুস্তিকায়।
পুস্তিকার ৩৬ ও ১৭৯ পৃষ্ঠায় বাংলাদেশে সিমেন্স কম্পানির সঙ্গে আরাফাত রহমান কোকোর অনৈতিক আর্থিক যোগসাজশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। ৩৬ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান করে দেখেছে, সিমেন্স বিভিন্ন দেশে সরকারি কাজ পেতে জনপ্রশাসন কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে কনসালট্যান্টদের ঘুষ দেওয়া হতো। কনসালট্যান্টরা এর বিনিময়ে সরকারি কর্মকর্তা ও সিমেন্স কর্তৃপক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেছেন। আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ ও ভেনিজুয়েলায় এ ধরনের ব্যাপক দুর্নীতির দায়ে সিমেন্সকে শেষ পর্যন্ত ৪৫ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়।
পুস্তিকার ১৭৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে ঘুষ হিসেবে বিদেশি একটি কম্পানির দেওয়া অর্থ ২০০৯ সালে বাজেয়াপ্ত করার পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের যুক্তি ছিল, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আমেরিকান মুদ্রার বিনিময় কাজটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষাকারী ব্যাংকের মাধ্যমেই হতে পারে। ঘুষ দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি (সিমেন্স) বিদেশি হলেও সেটি নিউইয়র্ক স্টক এঙ্েেচঞ্জে নিবন্ধিত, আর তাই প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের আইনের ঊধর্ে্ব নয়।
এর আগে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ ৩০ লাখ ডলার পুনরুদ্ধারের জন্য আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছে। কোকো এই অর্থ জার্মানির প্রতিষ্ঠান সিমেন্সের কাছ থেকে গ্রহণ করে সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি ব্যাংকে জমা রাখেন।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত গত ৩০ নভেম্বর কোকো ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী আকবর হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন সাইমনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই পুস্তিকাটি প্রকাশিত হলো। কোকো ও সাইমনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৭২ ডলার ও সিঙ্গাপুরে ২৮ লাখ ৮৪ হাজার ৬০৪ ডলার পাচারের অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশন (এসিসি) গত বছরের ১৭ মার্চ কাফরুল থানায় মামলাটি দায়ের করে।
প্রসঙ্গত, চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে আরাফাত রহমান কোকো এখন থাইল্যান্ডে আছেন।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger