শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত

দেশে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কনকনে ঠাণ্ডায় জীবনযাত্রা এখন প্রায় বিপর্যস্ত। চুয়াডাঙ্গা থেকে শুরু করে পাবনা-ঈশ্বরদী-রাজশাহী-সৈয়দপুর অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ।

আর মাদারীপুর, শ্রীমঙ্গল, সাতক্ষীরা, যশোর, বরিশাল অঞ্চলে রয়েছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। ঘন কুয়াশায় নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। তবে ফ্লাইট অনুসন্ধান থেকে জানানো হয়েছে, বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইট আসা-যাওয়ার সময় পরিবর্তন করায় বিমান চলাচলে তেমন কোন বিঘ্ন সৃষ্টি হয়নি।

আবহাওয়া দপ্তর জানায়, আরও অন্তত দুইদিন এ অবস্থা বিরাজ করতে পারে। সাইবেরিয়ার হিমেল হাওয়া হিমালয় ও ভারতীয় ভূ-ভাগ অতিক্রম করে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বদিক দিয়ে দেশে ঢুকে পড়ায় এই শৈত্যপ্রবাহ। তবে সাধারণত জানুয়ারি মাসে দেশে যে তাপমাত্রা থাকে এখন পর্যন্ত তার কোন হেরফের হয়নি; বরং বলা যেতে পারে এটা এই সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তা মাঝারি শৈত্য প্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটি হয় মৃদু শৈত্য প্রবাহ। গতকাল সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের তীব্রতা সম্পর্কে আবহাওয়া বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, শৈত্য প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে আরো দুইটি ঘটনা ঘটছে। এর একটি হালকা বায়ু প্রবাহ। আর দ্বিতীয়টি হলো ঘনকুয়াশা। কুয়াশার কারণে সূর্যরশ্মি মাটির কাছাকাছি পেঁৗছাতে পারছে না। ফলে মাটি গরম হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। শৈত্য প্রবাহের সঙ্গে এই দুইটি বিষয় মিলেমিশে শীত তীব্রতর অনুভূত হচ্ছে।

রাজধানীর অবস্থা ঃ রাজধানীতে গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকভাবে এই তাপমাত্রায় খুব বেশি শীত অনুভূত হওয়ার কথা নয়; কিন্তু হালকা বায়ু প্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল শীত ছিল তীব্র। তাই ভর দুপুরেও সূর্যকে তেমন তেজস্বী মনে হয়নি। মানুষকে শীত নিবারণী কাপড় গায়ে চলাফেরা করতে দেখা যায়। ঠাণ্ডায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করছে বস্তিবাসী।

এদিকে রবিবার রাতে ঘন কুয়াশার কারণে মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-রুটে ফেরি চলাচল ১০ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এ সময় নদীপথে আটকা পড়ে ৫টি ফেরি। মাওয়া ও কাওড়াকান্দি ঘাটের দুই পাড়ে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট।

আমাদের পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে সেখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল গোটা জেলা। একই কারণে যানবাহন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। শীতের কারণে বেশি বিপাকে পড়েছে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের লোকজন। এছাড়া জেলার নদ-নদী থেকে পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকরা তীব্র শীতের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। একইসাথে শিশুদের শীতজনিত সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।

দিনাজপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন,হিমালয়ের সনি্নকটে হওয়ায় এই জেলায় শীতের তীব্রতা বেশি। গত কয়েকদিন ধরেই চলছে শৈত্যপ্রবাহ। কুয়াশা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। তাই বিপর্যস্ত জনজীবন। সবচেয়ে কষ্টে আছে হতদরিদ্ররা। এদিকে তীব্র শীতে নষ্ট হচ্ছে শীতকালীন ফসল ও ইরি/বোরোর বীজতলা।

আমাদের বগুড়া অফিস জানায়, কনকনে শীতে জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে প্রকৃতি। দুপুরের আগে সূর্যের মুখ দেখা মেলে না। সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল কমে গেছে। যাত্রী না পেয়ে অধিকাংশ দূরপালস্নার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ছড়িয়ে পড়ছে শীতজনিত নানা রোগ। নিউমোনিয়া ও কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে শিশুরাই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশী।

বদরগঞ্জ (রংপুর) সংবাদদাতা জানান, ঘন কুয়াশা ও শৈতপ্রবাহে এলাকার বোরো বীজতলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে কৃষক হতাশ হয়ে পড়েছেন।

ভারতে ২৪ জনের মৃতু্য ঃ টানা শৈত্যপ্রবাহে ভারতের উত্তরাঞ্চল জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে শীতজনিত কারণে মারা গেছে ২৪ জন। তীব্র শৈত্যপ্রবাহে রাজধানী নয়াদিলিস্নসহ কাশ্মীর, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং উত্তর প্রদেশের জনজীবন থমকে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে কাশ্মীরের তাপমাত্রা নেমে গেছে হিমাংকের ২৩ ডিগ্রি নিচে। ঘন কুয়াশার কারণে দিলিস্নর বিমান ব্যবস্থা হচ্ছে বিঘি্নত। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, চলমান শৈত্যপ্রবাহ আরো তীব্র হতে পারে।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger