তবু পোসাদা সন্ত্রাসী না!

ত শতাব্দীর অন্যতম ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী লুইস পোসাদা ক্যারিলেসের বিচার শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত বৃহস্পতিবার টেঙ্াসের একটি আদালতে তাঁর শুনানি শুরু হয়। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিথ্যা বলায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন মহল। তারা বলছে, এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' স্লোগান দিলেও এক্ষেত্রে দ্বৈত নীতি অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র। তাই নিজেদের পক্ষে কাজ করা সন্ত্রাসী পোসাদাকে শাস্তি দিতে চায় না দেশটি।
কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের 'সেরা অস্ত্র' হিসেবে বিবেচনা করা হত সিআইএয়ের সাবেক এজেন্ট পোসাদাকে। শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পরিকল্পনার কথা স্বীকারও করেছেন তিনি।
ভেনিজুয়েলার নাগরিক হলেও পোসাদার জন্ম কিউবায়। দেশটিতে ১৯৫৯ সালের বিপ্লবের পর কিউবার অন্য অনেক প্রবাসীর মতো তাঁকেও নিজেদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। কাস্ত্রো সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ১৯৬১ সালের 'বে অব পিগস' হামলায়ও অংশ নেন পোসাদা। এ হামলা ব্যর্থ হলেও পরবর্তী সময়ে পোসাদা কিউবাকে অস্থিতিশীল করার জন্য বেশ কয়েকটি হামলার পরিকল্পনা করেন। তাঁর পরিকল্পনায় সবচেয়ে বড় হামলা হয় ১৯৭৬ সালের ৬ অক্টোবর। পোসাদার নির্দেশে পেতে রাখা বোমায় ওইদিন কিউবার একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৭২ জন মারা যায়। এ ঘটনায় ভেনিজুয়েলায় তাঁর কারাদণ্ড হয়। কিন্তু পাদ্রী সেজে জেল থেকে পালিয়ে যান তিনি। ১৯৯৭ সালে কিউবার বেশ কয়েকটি হোটেল ও নৈশক্লাবে হামলা হয় পোসাদার নির্দেশে। এসব হামলায় একজন ইতালীয় পর্যটকসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়। ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে পোসাদা বলেন, 'কিউবার পর্যটন ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই এ হামলা চালিয়েছিলাম। যাতে পর্যটকরা ভয়ে আর সেখানে না যায়।' সর্বশেষ ২০০০ সালে পানামা সফরের সময় কাস্ত্রোকে হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগে কারাদণ্ড দেওয়া হয় পোসাদাকে। চার বছর সাজা ভোগের পর পানামার প্রেসিডেন্ট তাঁকে ক্ষমা করে দেন।
সিআইএয়ের অবমুক্ত করা বিভিন্ন দলিলেও এসব হামলার সঙ্গে ৮২ বছর বয়সী পোসাদার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। কিউবা ছাড়া মধ্য ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও নানা অপকর্মের সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
তাঁর বিরুদ্ধে যে ১১টি অভিযোগ আনা হয়েছে সবই অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিথ্যা বলা নিয়ে। ২০০৫ সালে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের দায়ে মিয়ামিতে গ্রেপ্তার হন পোসাদা। ভেনিজুয়েলা তাঁকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানালেও তা নাকচ করে দেন যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। আদালত জানান, ভেনিজুয়েলায় ফেরত পাঠালে পোসাদাকে নির্যাতন করা হতে পারে। তখন ভেনিজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পোসাদাকে 'আমেরিকার লাদেন' হিসেবে অভিহিত করেন। অনেকে তাঁকে 'এ যুগের ফ্রাংকেনস্টেইন'ও বলে থাকেন।
পোসাদার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ না আনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তঁাঁর পরিকল্পিত হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা। বিমান হামলায় নিহত একজনের মেয়ে মার্গারিটা মোরালেস বলেন, 'ন্যায়বিচারের আশায় ৩৪ বছর কাটল। মনে হচ্ছে, বাবা হত্যার বিচার আর পাব না।' যুক্তরাষ্ট্রে ভেনিজুয়েলার পক্ষের আইনজীবী পারতিয়েরা বলেন, 'সন্ত্রাসীর মধ্যে আপনি ভালোমন্দ বাছাই করতে পারেন না। কারো বিচার করবেন, আবার কাউকে রক্ষা করবেন_এটা উচিত নয়।' সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, আল জাজিরা।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger