তারেকের ফোনে জঙ্গির মুক্তি, জামায়াতের বিপক্ষে বিএনপির ৫০ এমপি

ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশকে (জেএমবি) সহযোগিতা করেছেন। এমনকি তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান টেলিফোন করে জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের ডানহাত বলে পরিচিত কামারুলকে (মাহাতাব খামারু) ছাড়িয়ে নিয়েছেন।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ত্যাগ করে অনেক নেতা-কর্মী জেএমবিতে যোগ দিয়েছিলেন। তা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের বিতর্কিত অবস্থানের কারণে তাদের চারদলীয় জোটে রাখা নিয়ে জোটের ভেতরেই অসন্তোষ ছিল। খোদ বিএনপির অর্ধশত সংসদ সদস্য জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।
২০০৫ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকার সময় ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স জুডিথ চামাসের সঙ্গে তখনকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের
পৃথক বৈঠকে এ কথা উঠে এসেছে। ওই বৈঠক সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে চার্জ দি অ্যাফেয়ার্সের পাঠানো গোপন বার্তা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি বিকল্প ধারার গণমাধ্যম উইকিলিকস অন্য অনেক গোপন তারবার্তার সঙ্গে এটিও প্রকাশ করে।
কামাল সিদ্দিকী দেশজুড়ে একযোগে জেএমবির বোমা হামলার কথা তুলে ধরে জুডিথ চামাসকে বলেন, সরকার ওই হামলা ঠেকাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বরং সরকার জেএমবির অস্তিত্ব অস্বীকার করে এবং বিএনপির প্রভাবশালী অনেক নেতা জেএমবির শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিদের রক্ষা করেছেন। সিদ্দিকী বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোট করায় জামায়াতের কিছু নেতা-কর্মী দলছুট হয়ে জেএমবিতে যোগ দেন। তবে এ ব্যাপারে চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলে সিদ্দিকী কারো নাম উল্লেখ করেননি। সিদ্দিকী অবশ্য বলেন, 'জেএমবির সঙ্গে বিদেশি কিছু ব্যক্তি জড়িত আছে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।'
চারদলীয় জোটে জামায়াতকে রাখা নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যদের বিরোধিতার কথা জানিয়ে সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে উদ্বেগও প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ জামায়াতকে ভালো চোখে দেখে না। আর তাদের জোটে রাখাটা বিএনপির জন্যই বিব্রতকর।
জঙ্গি নেতা খামারুর পক্ষে তারেকের দূতিয়ালি প্রসঙ্গে সিদ্দিকী বলেন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) জেএমবি নেতা বাংলা ভাইয়ের সহকারী খামারুকে গ্রেপ্তার করেছিল। তবে তারেক রহমান ও তখনকার ভূমি প্রতিমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর হস্তক্ষেপে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পৃথক বৈঠকে লুৎফুজ্জামান বাবর নাম উল্লেখ না করে চার্জ দি অ্যাফেয়ার্সকে জেএমবি জঙ্গি অভিযোগে আটক এক ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা আটক ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ পায়নি এবং থানায় তার নামে কোনো মামলাও ছিল না বলে তিনি দাবি করেন। ওই ঘটনার সময় বাবর সিঙ্গাপুরে ছিলেন বলে উল্লেখ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব অবশ্য তারেক রহমানের টেলিফোনের পর খামারুকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান।
বাবর চার্জ দি অ্যাফেয়ার্সের কাছে স্বীকার করেন, জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ ওঠার আগে সরকারের বেশ কিছু মন্ত্রী বাংলা ভাইকে তাঁর কাজে সহায়তা করেছেন। তাহলে ওই মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে কি না_চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স এ প্রশ্ন করলে বাবর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, 'আমার পক্ষে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন।'
তারবার্তায় জুডিথ চামাস উল্লেখ করেন, কামাল সিদ্দিকী তাঁদের কাছে বহুবার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তারেককে 'অনভিজ্ঞ' ও 'ভয়ংকর' বলে উল্লেখ করেন সিদ্দিকী। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ মুখ্য সচিব বিএনপি ও খালেদা জিয়ার প্রতি অনুগত ছিলেন।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger