কানকুন জলবায়ু সম্মেলনঃ স্বল্পমেয়াদি সাফল্য, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই

মেক্সিকোর কানকুনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে সাফল্য সামান্যই। কোপেনহেগেনের বহুল আলোচিত সম্মেলন ব্যর্থ হওয়ার পর এবারের সম্মেলন কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হলে এ ধরনের বহুপক্ষীয় আলোচনা ভবিষ্যতে আদৌ রাষ্ট্রগুলোর কাছে কোনো আবেদন সৃষ্টি করতে পারত কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল। এ সম্মেলনের মাধ্যমে তা অনেকটাই কাটানো গেছে।

তবে জলবায়ু আলোচনার বেশ কিছু মুখ্য প্রশ্ন এবারও পাশ কাটিয়ে যাওয়া হলো। একটি ন্যায্য ও আইনগত বাধ্যবাধকতার চুক্তি করা যায়নি। অন্যদিকে কিয়োটো প্রটোকলের মেয়াদ বাড়ানো নিয়েও কোনো সমঝোতা হয়নি। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অথচ কিয়োটো প্রটোকলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে ২০১২ সালে। এটির পরের পর্যায় শুরু করার ব্যাপারে সম্মত হতে কয়েক বছর লেগে যাবে। এই শূন্যতা কীভাবে পূরণ হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা থেকেই যাচ্ছে। এই সমঝোতায় ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাও অনুপস্থিত। তা ছাড়া শিল্প খাতভিত্তিক কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। ফলে আরও এক বছর তারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে দূষণ ঘটিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেল।
কানকুন সমঝোতায় শিল্পবিপ্লবপূর্ব সময়ের সাপেক্ষে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ব্যাপারে অঙ্গীকার করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এ দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জন জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব এড়ানোর জন্য অপরিহার্য। তাই এ অঙ্গীকার ইতিবাচক। যদিও এই লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কোনো দেশ আইনগতভাবে বাধ্য নয়। গত কোপেনহেগেন সম্মেলনেও বহু অঙ্গীকারের কথা শোনা গেছে, কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি নেই বললেই চলে।
অন্যদিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব মোকাবিলায় গরিব দেশগুলোকে তহবিল প্রদানের ব্যাপারেও মতৈক্যে পৌঁছা গেছে। কোপেনহেগেন সম্মেলনেও ঝুঁকির মধ্যে থাকা দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তহবিল প্রদানের মুলো ঝুলিয়ে একধরনের আশাবাদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এবারের সম্মেলনেও তার ছায়া অপসৃত হয়নি। আমাদের জলবায়ু কূটনীতিকে আরও সক্রিয় করা প্রয়োজন। মূলত শিল্পোন্নত ও সাম্প্রতিক কালে বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। তাই ক্ষতিপূরণের দাবি ন্যায্য। অভিযোজনও বিরূপতা কাঠানোর কৌশল। জলবায়ু পরিবর্তন যে ভয়ানক বিপদ হাজির করে, তাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ওপরই জোর দেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য বাংলাদেশের দিক থেকে ন্যায্য তহবিল পাওয়ার চেষ্টা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ কার্বন নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নেওয়া।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger