নেতা-নেত্রীদের সম্পদের হিসাবঃ সবকিছু প্রকাশ করা হোক

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বিপুল সম্পদের হিসাব ও উৎস জানতে চাওয়ার পরদিন বিএনপির মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেশে-বিদেশে সম্পদের উৎস জানতে চেয়েছেন। বিরাজমান রাজনীতির তপ্ত হাওয়ায় এ রকম পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং তার ভাষা ও প্রকাশভঙ্গি সুস্থ মনোভাবের পরিচয় নয়। প্রধানমন্ত্রী সংসদে শুধু খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাসার সম্পদের বিবরণ তুলে ধরে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এই হিসাব বাড়িয়ে দেখানোর অভিযোগ বিএনপির মহাসচিব তুলতে পারেন। কিন্তু তিনি যে প্রধানমন্ত্রীর পিতা, পঁচাত্তরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে সপরিবারে নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আয়করের টিআইএন নম্বর জানতে চেয়েছেন, তা সত্যিই নিন্দনীয়। এ ধরনের বক্তব্য জাতির জন্যও অবমাননাকর।

কিন্তু মন্দের যেমন কিছু ভালো দিক থাকে, তেমনি এখানেও একটা ভালো দিক বেরিয়ে এসেছে, তা হলো, যাঁরা দেশ পরিচালনা করেন, তাঁদের সম্পদের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশের প্রশ্ন। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে। আগেও বহুবার এ প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু ব্যাপারটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য শুধু বাগ্যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহূত হয়ে এসেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অথচ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি যদি মানুষের জন্য হয়ে থাকে, তাহলে সেই মানুষকে আস্থায় নিয়ে সব নেতা-নেত্রীর সম্পদের পূর্ণ বিবরণ ও তার উৎস প্রকাশ করা উচিত।
প্রচলিত আইন অনুযায়ী, করযোগ্য আয় থাকলে আয়কর ও সেই সঙ্গে সম্পদ বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য সম্পদ বিবরণী দেওয়াও বাধ্যতামূলক। উপরন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সম্পদ বিবরণী প্রকাশের অঙ্গীকার করেছে। আওয়ামী লীগ তাদের ইশতেহারের ৫.৩ অনুচ্ছেদে বলেছে, ‘প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস প্রতিবছর জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।’ কিন্তু সেটা কথার কথা রয়ে গেছে। কয়েক মাস আগে শুধু অর্থমন্ত্রী তাঁর সম্পদের হিসাব প্রকাশ করে অন্যদেরও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন মাত্র।
অন্যদিকে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনের পর শপথ গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে সকল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করতে হবে।’ কিন্তু তাঁরাও এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত। হিসাব দেওয়ার চেয়ে সরকারবিরোধী রাজপথের আন্দোলনেই তাঁরা এখন বেশি উৎসাহী। তাতে আপত্তি নেই, কিন্তু ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি পালনে তাঁদের এত অনীহা কেন? সহায়-সম্পদের ব্যাপারে গোপন করার কিছু না থাকলে তা প্রকাশ করতে আপত্তি কেন?
অপ্রীতিকর সত্য হলো, দেশের নেতা-নেত্রীদের সম্পদ নিয়ে মানুষের মধ্যে আলোচনা ও প্রশ্ন রয়েছে। সে কারণেই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে সম্পদ বিবরণী প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দেয়। সব কাজে স্বচ্ছতার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে রাখঢাকই প্রধান। এ পরিস্থিতির অবসান দরকার। কথায় বলে, আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখাও। এখন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী নিজেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের সম্পদের হিসাব ও তার উৎস জনসমক্ষে প্রকাশ করুন। এরপর অন্য নেতারাও এগিয়ে আসুন। দেশে বা বিদেশে কার কত সম্পদ আছে, তা প্রকাশ করা হলে দেশে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বিরাট সাহায্য হবে।
Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger