মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা

রসিংদীতে গত বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত এবং দেড় শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন। দুটি ইঞ্জিন ও অনেক বগি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। আহতদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। বুধবার রাতেই ২৫ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। রাত ৮টার দিকে উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পেঁৗছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। তাদের সহযোগিতা করছে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তাৎক্ষণিক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কমিটি দুটি তাদের কার্যক্রমও শুরু করেছে।

বাংলাদেশে ট্রেন দুর্ঘটনা যেন নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হতে চলেছে। মুখোমুখি সংঘর্ষ, লাইনচ্যুত হওয়া, লেভেল ক্রসিংয়ে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষ ইত্যাকার ঘটনা অনবরত ঘটেই চলেছে। গত এক বছরে এ রকম ৭২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাতে কয়েক শ মানুষ হতাহত হয়েছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? যতদূর জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের অবস্থা এখন এতটাই শোচনীয় যে এটি রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। রেলওয়েতে এখন দক্ষ লোকবলের অভাব চূড়ান্ত পর্যায়ে পেঁৗছেছে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে অধিকাংশ রেলপথ চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। ট্রেন চলার সময় লাইন মাটিতে দেবে যায়। লাইনের নিচে পাথর প্রায় নেই বললেই চলে। স্লিপারগুলোও ভাঙাচোড়া। অধিকাংশ ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল এক দশক বা আরো বেশি সময় আগেই শেষ হয়ে গেছে। অথচ রেলওয়ের উন্নয়নের কথা বলতে বলতে মন্ত্রী-আমলাদের মুখে ফেনা উঠে যায়। বিগত সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী তো আমাদের সুপারসনিক ট্রেন, হাওয়াই ট্রেন, পাতাল ট্রেন_কত রকম স্বপ্নই দেখিয়েছিলেন। সেসব বস্তাপচা কথায় মানুষের আস্থা এখন খুবই কম।
রেলওয়েতে প্রকল্পের পর প্রকল্প নেওয়া হয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। ১৪ বছর আগে ৪৯টি ইঞ্জিন কেনার জন্য ৫৫৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল তিন বছর। অথচ এ পর্যন্ত কেনা হয়েছে ৩৭টি। দুই দফা সংশোধনের পর বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ৯৩৫ কোটি টাকা। রেলওয়েতে এভাবে সময় বাড়ানোর চক্রে বর্তমানে প্রায় ৩৬টি প্রকল্প ঘুরপাক খাচ্ছে। তিন থেকে চার বছর আগে নেওয়া পাঁচটি প্রকল্প রয়েছে, যেগুলোর মেয়াদ আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, অথচ সেগুলোর কোনো কাজই এখনো শুরু হয়নি। ২০০৬ সালে রেলওয়ে সংস্কার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, যার মেয়াদ শেষ হবে ২০১১ সালের জুনে। অথচ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে প্রকল্পের অর্ধেক কাজও এখনো শেষ হয়নি। ২০০৪ সালে ১৩টি স্টেশনে সিগনালিং ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু কাজ শুরু না হওয়ায় এর মেয়াদ ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে নেওয়া ২০টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ছয়টি প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করা গেছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কেন হয়, তা সচেতন যেকোনো নাগরিকেরই জানা কথা। কিন্তু জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকারের আমলেও এ ধরনের জটিলতা বিদ্যমান থাকবে, এটা কারো কাম্য নয়। নরসিংদীর দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাসহ অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন। জানি না এ শোক হতাহতদের পরিবারকে কতটুকু শান্ত্বনা দিতে পারবে। আমরা চাই, এ খাতটি যেন আর রাষ্ট্রীয় অবহেলার শিকার না হয়।

Share this post :

Post a Comment

Test Sidebar

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. BdNewsTest - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger